নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এবার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল ভারত। ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দামের লাগাম টানতে কেন্দ্র সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক আরোপ করেছে। এটি আজ শনিবার (১৯ আগস্ট) থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
আগামী সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে—এমন খবর প্রকাশের পর রপ্তানিতে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিল সরকার।
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২ মাস ২০ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৫ জুন স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ পেঁয়াজ এসেছিল সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। যদিও এতে দেশে পেঁয়াজের দামে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এখন ভারত রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী অক্টোবরে নতুন ফসল না আসা পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে গত সপ্তাহে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বাফার স্টক থেকে অবিলম্বে পেঁয়াজ ছাড় করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।
সরকার ই-নিলাম, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যানেলে হ্রাসকৃত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির চিন্তাভাবনা করছে। ভোক্তা সমবায় এবং করপোরেশন পরিচালিত খুচরা আউটলেটগুলোর মাধ্যমে এই পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে।
এদিকে সরকার সরবরাহ সংকটের সময় পেঁয়াজের অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিলের (পিএসএফ) মাধ্যমে তিন লাখ টন পেঁয়াজ মজুত করেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। ১০ আগস্ট পর্যন্ত রান্নাঘরের এই অত্যাবশ্যক খাদ্যপণ্যের জন্য সর্বভারতীয় খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ২৭ দশমিক ৯০ রুপি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি কেজিতে ২ রুপি বেশি।
এর আগে, ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজ্যুমারস ফেডারেশন (এনসিসিএফ) এবং ভারতের ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন (এনএএফইডি) মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে দেড় লাখ টন করে পেঁয়াজ সংগ্রহ করেছে।
এ ছাড়া পেঁয়াজের সংরক্ষণ সময় বাড়ানোর জন্য সরকার ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের (বিএআরসি) সহায়তায় একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছে।
ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, রবি মৌসুমে পেঁয়াজ সংগ্রহের ফলে বেশিসংখ্যক ভোক্তা এলাকায় সরবরাহের জন্য পেঁয়াজের বাফার ২০২০-২১ সালে ১ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ২০২৩-২৪ সালে ৩ লাখ টন করা হয়েছে।
ভারত পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের প্রায় ৬৫ শতাংশই রবি মৌসুমে সংগ্রহ করা হয়। এপ্রিল-জুন মাসে ফসল তোলা হয় এবং অক্টোবর-নভেম্বরে খরিফ ফসল তোলা পর্যন্ত এই পেঁয়াজই ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণায়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৩৫-৩৬ লাখ টন। উৎপাদন হয় ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন। গত বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন। তবে গরম আর সংরক্ষণের অভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাহিদা মেটাতে প্রায় পুরো বছর আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। আর এসব পেঁয়াজের সিংহভাগ আসে ভারত থেকে। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
এমআই