জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের মাঝে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। পুরো সপ্তাহ জুড়ে এই লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলবে বলে জানান নেতাকর্মীরা।
বিতরণ করা লিফলেটে বলা হয়েছে, 'উপাচার্য নেতৃত্ব দিয়ে পূর্বতন সমস্যাগুলো সমাধান করে নতুন সম্ভাবনার পথে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য যাচ্ছে তার উল্টো পথে। পূর্বের সমস্যাগুলোর সমাধান তো করতেই পারেনি। বরং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার সংকুচিত করছে, সঙ্গে আছে শিক্ষার্থীদের উপর ফি বাড়ানোর নতুন নতুন ফন্দিফিকির। এমন অযোগ্য লোককে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব থেকে না সরালে খুব অল্প সময়ে তার অযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে একেবারে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করবে।'
ভর্তি জালিয়াতি ও প্রক্সিকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, '২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রক্সিকাজে জড়িত থাকা একজন শিক্ষার্থী প্রথম হন। বর্তমানে একজন গ্রেফতার হয়েছে। তার মানে আরও অসংখ্য শিক্ষার্থীর এভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর প্রমাণ গতবছর প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এদেরকে খুঁজে বের করে ভর্তি বাতিল করার ইচ্ছা উপাচার্যের নেই। সম্ভবত তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, না হলে তিনি অধিকতর তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করতেন।'
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ জন ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৬০ জন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে পোষ্য কোটার মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়েছে উল্লেখ করে লিফলেটে বলা হয়েছে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সন্তানরা ফেল করেও ভর্তি হতে পারে। অথচ হতদরিদ্র মানুষের সন্তানরা উচ্চ মূল্যে ফরম কিনে ভালো নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারেনা। শিক্ষকরা নির্লজ্জ, বেহায়ার মত পোষ্য কোটার নামে ডাকাতি করে। এই উপাচার্য তিনবার ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করলেও সমতা নিশ্চিতে ডাকতির মাধ্যম পোষ্য কোটা বাতিল করেননি।'
গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর পিছনে উপাচার্যকে দায়ী করে তারা বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা অতীতের থেকে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। এর কারণগুলো কী কী? কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যাবে তার উদ্যোগ নেওয়া উপাচার্যের দায়িত্ব। যেহেতু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি তা করেননি কারণ এটাকে তার কাছে সমস্যা মনে হয় নি। তিনি তো মুখিয়ে আছেন নিয়োগ বাণিজ্য আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাটের নেশায়।'
২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ভর্তি ফরম বিক্রি করে আয় হয় যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ২৪ কোটি। এতো টাকা দিয়েও তিনি প্রক্সি ঠেকাতে পারেন না, তাহলে তিনি কোন যোগ্যতায় উপাচার্যের পদে থাকবেন বলে প্রশ্ন তুলেন তারা। এছাড়া গত দুই বছরে যিনি একটি সিটও দখলমুক্ত করতে পারেননি, আর কত বছর উপাচার্য থাকলে ৫০০ সিট দখলমুক্ত করতে পারবেন? উপাচার্যই এসব করার সুযোগ দিচ্ছেন যাতে দখলদার সংগঠন তার বিরুদ্ধে কথা না বলে এবং তার অবাধ লুটপাট খুব সহজ হয়।'
আবাসিক হলে ভর্তি ও বিজ্ঞান গবেষণাগারে নমুনা পরিক্ষার ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিনোদপুরের ঘটনার তদন্ত না করা, আহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি বলে দাবি করেন তারা। এসব দাবি জানিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেন, উপাচার্যের কাজটা কি? কেন তিনি উপাচার্য থাকবেন?
জানতে চাইলে নাগরিক ছাত্র ঐক্যর সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আসন বাণিজ্য, ভর্তি জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। উপাচার্যের দায়িত্ব সমস্যাগুলো সমাধান করা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দুই বছর হয়েছে। কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি, উল্টো বেড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রক্সি জালিয়াতি ও আসন বাণিজ্যের অভিযোগ আসলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। এই উপাচার্য ছাত্রলীগের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।'
সময় জার্নাল/এলআর