'যাহা চাই যেন জয় করে পাই, গ্রহণ না করি দান' প্রতিপাদ্যের আলোকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ২০২৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সেশনের নবাগত শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে নবীন শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। শপথ গ্রহণ শেষে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনের অডিটোরিয়ামে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ এবং মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে ডাক্তার জাফরুল্লাহ্ চৌধুরীর জীবনকাল এবং গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্মিত ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এসময় ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করা হয় নবীন শিক্ষার্থীদের।
ফলিত গণিত বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফয়জুননেছা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, 'নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু। স্বপ্ন নিয়ে এসেছি সুন্দর যাত্রা শুরু করতে। যারা আমাদের এতো সুন্দর করে বরণ করে নিয়েছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টুকু জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা নবীনরা শুধু বইয়ের জ্ঞানই নয়, শিখবো কীভাবে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায় এবং কীভাবে আর্দশবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা যায়। শিক্ষক এবং অগ্রজদের সহযোগিতায় আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে দৃঢ় প্রত্যয়ী।'
নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কৃষি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম বলেন, 'ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী সমাজে একটি আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই করে গেছেন। জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর আপনারা হলের তার আদর্শের বাহক। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের প্রত্যয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মাইলফলক করে তুলতে হবে সবুজে ঘেরা আমাদের ক্যাম্পাসটিকে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হয়ে মানসিক বিকাশের মাধ্যমে মনকে সুন্দর করে তুলবে এবং সমাজ ও দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে এটিই আমার প্রত্যাশা।'
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নবাগত শিক্ষার্থীদের অভিবাদন জানিয়ে বলেন, 'একসাথে চলা ও অজানাকে জানার প্রয়াস হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আদর্শ। এখানে একা নয়, সকলে মিলে কাজ করাই শিক্ষা। এই প্রতিষ্ঠান ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠিত, যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন—যেখানে সকলের সমান অধিকার ও সুযোগ থাকবে। গণ বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। জ্ঞান ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এটি সামাজিক মালিকানা এবং মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থা জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে মুনাফা, যুদ্ধ, ও ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করছে; যেমন: পারমাণবিক বোমা বা জলবায়ু বিপর্যয়। তাই তরুণদের উচিত জ্ঞানচর্চা, ইতিহাস জানা ও মনুষ্যত্ব গড়ে তোলা। যাতে জ্ঞান মানবিকতা গঠনের হাতিয়ার হয়ে উঠে।'
নবাগত শিক্ষার্থীদের স্বাগত এবং অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, 'আগামী চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আপনাদের সুন্দর সময় অতিবাহিত হোক তা আমাদের একান্ত কাম্য। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ পুরুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি স্বল্প খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে তাই তার দেখানো পথেই চলতে হবে। এই চারটি বছর আপনাদের বাকী জীবনের পাথেয়। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে দেশের কাজে নিজেদের বিলিয়ে দিতে হবে। জ্ঞান অর্জনের সকল ব্যবস্থাই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। এখানে ভালো মন্দ উভয়ই আছে। ভালোকে বেছে নিয়ে মন্দকে বর্জন করতে হবে। আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর হোক এই কামনা করি।'
নবীন বরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নাচ, গান, কবিতা পরিবেশন করেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।