সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭৫ একরের হরিৎক্ষেত্র হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত। তবে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রচুর গাছ কাটা এবং কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার দরূণ ক্যাম্পাস হারাতে চলেছে তার সেই পুরনো জৌলুস। যা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকেই ব্যাথিত করে। সকলেই স্বপ্ন দেখেন ক্যাম্পাস ফিরে যাক তার চিরচেনা রূপে।
কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগই বা নেন ক'জন। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন সজীব। সবুজ ক্যাম্পাস রক্ষায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। সবুজ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাতে নিয়েছেন 'প্রজেক্ট ১৭৫'। এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর জায়গাজুড়ে দ্রুততম সময়ে ফলন দেয়া ১৭৫টি উন্নত জাতের ফলগাছ রোপণ করবেন তিনি।
২০১৯ সালে ১ম বর্ষের শেষের দিকে শুরু করেন প্রজেক্টের কাজ। নানা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে দীর্ঘ চার বছরের পরিশ্রম আর সাধনায় বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে সজীবের 'প্রজেক্ট ১৭৫'। আগামী সেপ্টেম্বরেই এসব গাছ প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করবেন বলে জানান তিনি।
ক্যাম্পাস সবুজায়নে তার এই পথচলা মোটেও সহজ ছিলো না। শুরুতে তিনি যেসব গাছ লাগানোর কথা ভাবেন, সেসব গাছের দাম অনেক বেশি। তাই সাধ থাকলেও ছাত্র অবস্থায় এত টাকা খরচ করে চারা রোপন করার সাধ্য ছিলোনা তার। তাছাড়া গাছগুলো সহজলভ্যও নয়। তাই গ্রহণ করেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বিকল্প উপায় হিসেবে বেছে নেন গ্রাফটিংকে। গ্রাফটিংয়ে তার বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তার আবাসিক হলের (শেখ রাসেল হল) পিছনের খালি জায়গায় বিভিন্ন ফলের বাছাইকৃত জাত থেকে সৃষ্টি করেন উন্নতজাতের দ্রুত ফলনশীল চারা। এর জন্য প্রথমে বিভিন্ন ফলের বীজ সংগ্রহ করে তার থেকে চারা করতেন।
চারাগুলো গ্রাফটিংয়ের উপযুক্ত হলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাছাই করা উন্নতজাতের গাছের সায়ন সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসে এনে গ্রাফটিং করতেন। যেখানেই ভালো জাতের প্রজাতি পেতেন তা সংগ্রহ করতেন। এমনকি কুরিয়ারের মাধ্যমেও বিভিন্ন জায়গা থেকে সায়ন সংগ্রহ করে থাকেন সজীব।
বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে ১২ থেকে ১৩ টি জাতের উন্নত প্রজাতির আমের চারা। এগুলোর মধ্যে এমন জাতও রয়েছে যেগুলোর এক একটি আমের ওজন হবে ৫ থেকে ৬ কেজি। এছাড়া গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে এক গাছে দুই থেকে তিন জাতের আম পাওয়া যাবে এমন গাছও তৈরি করেছেন তিনি।
বেলের মধ্যে যেটার সবচেয়ে বেশি মিষ্টতা পেয়েছেন তার ৪০টার মতো চারা রয়েছে তার সংগ্রহে। তার সংগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গাছটি হলো লাল তেঁতুল। বাংলাদেশে এই গাছটি দুষ্প্রাপ্য বলেও জানান তিনি। এছাড়া গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরার ভালো মানের কাঁঠালের চারাসহ বর্তমানে সর্বমোট ১৮০ টির মতো চারা রয়েছে তার এই প্রজেক্টে।
প্রজেক্টের বিষয়ে সজীব বলেন, 'আসলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই দাবি থাকে যে সবুজ ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে হল কিংবা কনস্ট্রাকশনের কাজে প্রতি বছরই কিছু গাছ কাটা পড়ে। আমার চিন্তাভাবনা ছিলো ক্যাম্পাসের সবুজায়নে আমার ছোট একটা কনট্রিভিউশন হলেও থাকবে। কিন্তু টাকা দিয়ে কিনে রোপন করা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তখন আমি যেহেতু কলম শিখতেছিলাম, তাই দেখলাম যে আমি যদি চারা তৈরি করে কলম করতে পারি সেক্ষেত্রে আমার খরচ পড়বে ১০ টাকার মতো।
এতে চারাও বেশি করে তৈরি করা যাবে এবং গাছের ফলনও পাওয়া যাবে তাড়াতাড়ি। তাই আমি ক্যাম্পাসের চারপাশ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করা শুরু করি। এক বছর পর সেগুলো কলমের উপযুক্ত হলে মাতৃগাছ থেকে সংগ্রহ করা সায়নগুলো দিয়ে কলম করি। এক্ষেত্রে আমি ফলগাছকে বেছে নিয়েছি যাতে সবুজায়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা এগুলো থেকে ফল খেতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি এই প্রজেক্ট শুরু করি ২০১৯ সালে। প্রথম ৫০ টা গাছ দিয়ে আমি শুরি করেছিলাম। এখন বর্তমানে ১৮০ টার মতো গাছ রয়েছে। আমার পরিকল্পনা আছে আমি খুব শীঘ্রই গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবো। এগুলো আমার জন্য একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে, যখন আমি পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে আসবো তখন এই গাছগুলো দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো আমার মনে পড়বে। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই গাছগুলো সঠিকভাবে পরিচর্যা এবং সংরক্ষণ করুক।'
সময় জার্নাল/এলআর