ডাঃ আহমেদ জোবায়ের :
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হলো দূর্নীতির আখড়া এটা কে না জানে?
জনগন শুধু ডাক্তারদের গালি দিয়েই গেলো কিন্ত তাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশার কারণ তারা অনুসন্ধান করেননি।
হরিলুট চলছে অনেক বছর ধরেই।
গত ১২ বছর ধরে লুটেপুটে খেয়ে ফেলছে।
দুই নাম্বারি কামাই ও কমিশন পেতে পেতে তাদের জিহবা এত লম্বা হয়েছে যে এখন প্রথম আলোর অনুসন্ধাণী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে মারধোর করার সাহসও তারা পেয়ে গেছে।
আফসোস আপনি যদি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেন,আপনাকে তারা জানেও মেরে ফেলতে দ্বিতীয়বার ভাব্বে না।
একজন নারী সাংবাদিককে ফাইল চুরির অভিযোগ এনে সচিবালয়ে আটকে রেখে মারধোর করার মত জগণ্য অপরাধ করতেও এদের বুক কাঁপেনা।
কারণ এদের মাথার উপর শক্তিশালী আশ্রয়ের ছাতা মেলানো।
হেলথ সেক্টরের গডফাদার মিঠুর কথা কে না জানে।
একসময় সবকিছু ছিলো মিঠুর নিয়ন্ত্রনে।
মিঠুর কথাই ছিলো একশন।
হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে মিঠু।
তাকে দুইটা মেডিকেল কলেজও অনুমোদন দেওয়া হয়েছিলো।
মিঠুর চ্যালা ছিলো আবজাল।সে ছিলো একজন অফিস সহকারী।
২৪ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী করা অফিস সহকারী মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি কিনেন।
তার বউ ছিলো স্টেনোগ্রাফার, ২০ হাজার টাকা বেতন।
তাদের ঢাকায় তিনটি বাড়ি,৬টি ফ্ল্যাট, ঢাকার বাইরে ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট, সিডনিতে বাড়ি সব মিলিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ, মানিলন্ডারিং করেছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক মালেক এর কথা জানলাম আমরা।
একজন ড্রাইভার শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এখানে চাকুরী করে।
আলাদিনের চেরাগ আছে মনে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম সাহেব একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, সবাই প্রশংসা করে শুধু টিআইবি করেনা।
কিভাবে টিআইবি উনার প্রশংসা করতো?
উনার সুপুত্র তমাল সাহেবের আমেরিকায় যে মিলিয়ন ডলারের সম্পদের হদিস বেরিয়েছিল, তার উৎস কি ছিলো?
তিনি তো এই দেশের হেলথ সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছিলেন।
এডমিশন টেস্টে প্রশ্ন ফাঁস জালিয়াতদের পক্ষ তিনি নিয়েছিলেন।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটা নিয়োগ নিয়ে অনুসন্ধাণী রিপোর্ট করেন রোজিনা ইসলাম।
পেশাদারিত্ব ও দেশ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সেই রিপোর্ট।
তিনি আরেকটি রিপোর্ট করেন ৩৫০ কোটি টাকার কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে।
সেই রিপোর্টে নিয়োগ বোর্ডের দুইজন স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাদের এক কোটি টাকা ঘুষ অফার করা হয়েছিলো।
সেই ঘুষের অফার দিয়েছিলেন আবার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রালয়ের উপসচিব শ্রী নিবাস।
তিনি সেই নিয়োগ বোর্ডের সদস্যকে পদোন্নতি ও পরে আরও টাকা পাওয়ার লোভ দেখিয়েছিলেন।
রোজিনা ইসলামের রিপোর্ট এই লুটপাট ও চেটেপুটে খাওয়া সিন্ডিকেটের গরম গরম টাকা কামানোর রাস্তায় কিছুটা বাখড়া দিয়েছিলো এবং তাদের শরমিন্দা করেছিলো।
আজ তাকে সুযোগ পেয়ে ফাইল চোর সাজিয়ে হেনস্থা করে প্রতিশোধ নেওয়ার এক ন্যাক্কারজনক অধ্যায় সূচিত হলো।
দূর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদেরকে জিরো টোলারেন্স এর আশা দেখানো হয়েছিলো।
কেমন জিরো টোলারেন্স তাতো আবজাল মিঠু মালেক ড্রাইভার জানিয়ে দিছেন।
আফসোস।
আপনি যখনই নাগরিক দায়িত্ব থেকে এসব অপকর্মের বিরোধিতা করবেন, চোর চোট্টাদের বিরুদ্ধে মুখবেন, তখনই আপনি ফাইল চোর হয়ে যাবেন এবং বেড়ধক মাইর খেয়ে বমি করে দিবেন।
আপনি তখন হয়ে যাবেন উন্নয়ন বিরোধী গনশত্রু।
রোজিনা ইসলামদের জন্য আজকের ঘটনা একটা ম্যাসেজ মাত্র।
সামনে আরো বহু খতরনাক দিন অপেক্ষা করছে।
আজকের মত সামনের দিনগুলিতেও রোজিনা ইসলামদের গলা চেপে ধরা হবে।
চেতনার বড়ি গেলানোতে সাংবাদিকদের দায় কম না কিন্ত সেই দায় মিটাতে হবে মাইর খেয়ে বমি করে।