অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
বিপুল উৎসাহে আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা। কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তিতে আমন আবাদ করছেন তারা। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চারা রোপণের জন্য মাঠ তৈরী হয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি ঘুরে দেখা যায় মাঠে মাঠে রোপা আমন ধান রোপনের ধুম লেগেছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উদয় হলেই দল বেঁধে কৃষক ছুটে চলে মাঠের প্রাণে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে তারা রোপা আমন ধান রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ জমিতে পানি দিচ্ছেন কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউবা চারা রোপন করছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক বীজ তলা তৈরীর কারনে চারার সংকট নেই। কয়েকজন চাষি টানা বৃষ্টিতে বীজতলা পানির নিয়ে নিচে থাকায় কিছু কিছু বীজতলা নষ্ট হয়েছে বলে জানান।
তবে তারা ভিন্ন উপায়ও বের করে রেখেছেন। অতিরিক্ত চারা পুরণ করতে পারে বন্যা কবলিত এলাকার ঘাটতি। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন, কোথাও মাঠ সমান করার জন্য শ্যালোইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার টিলার ছাড়াও কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করছেন।
আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কেউ আবার জৈব সার জমিতে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে তৈরি জমি বৃষ্টির পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। রোদের গরমে কৃষকদের শরীর থেকে বইছে ঘাম, মাথায় বেঁধে রেখেছেন গামছা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আমন চাষে অধিক আগ্রহী।
শুকিয়ে থাকা খাল, বিল, জলাশয়ে ভরছে পানিতে। তীব্র খরায় শুকিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেতেও ফিরে এসেছে আর্দ্রতা। নিচু জমিতে জমেছে বৃষ্টির পানি। আর এই সময়টায় রোপা আমন চাষে ব্যস্ত হয়ে কৃষকেরা উঠছেন। জমি প্রস্তুত, চাষাবাদ এবং ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের।
এই অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি সেচ ছাড়াই এই অঞ্চলের কৃষকরা রোপা আমন ধান চাষ করে থাকেন। এখানকার কৃষকরা জুলাই মাসের শেষে এই রোপা আমন ধানের চাষ করে থাকে। উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সবজু ধানের কচি চারায় মাঠ ভরে উঠেছে। সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নে সরোজমিনে দেখা যায়, রোপা আমন ধানের জমি চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রের যুগে প্রয়োজনের তাগিদে পাওয়ার টিলারের পাশা পাশি গরুর লাঙ্গল দিয়ে কিছু পরিমাণে জমি চাষ করছে কৃষক।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাই এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকেরা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রোপা আমন ধান রোপন করছেন। তারা আরো জানায়-পানি সেচ না লাগায় এ অঞ্চলের কৃষক অনেকটা কম খরচেই রোপা আমন ধান চাষ করতে পারছে।
চারা বিক্রির ব্যাপারে তারা বলেন, এবছর ধান চারার সংকট নেই। জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃমোহাইমেন হোসেন বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে আমন চারা রোপণে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। সদরেরবিভিন্ন ইউনিয়নে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১২৫০হেক্টর ধরা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোঃ জাকির হোসেন জানান, এবছর সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়নে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানে চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের ৫০ হাজার ৪০ হাজার হেক্টর, হাইব্রিড ১০ হাজার হেক্টর ও স্থানীয় ২০হাজার ৫৩৫হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ। মূলত জুন-জুলাই মাস আমন ধান রোপণের সময়।
এ বছর বৃষ্টিপাতও পিছিয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কৃষকরা আমনের চারা রোপণ শুরু করেছেন।কৃষি প্রণোদনার আওতায় ধান, গম, ভুট্টা ও সরিষার বীজ এবং সার বিতরণসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী দিয়ে কৃষকদের পাশে সব সময় রয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলাজুড়ে কৃষকরা এখন আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সময় জার্নাল/এলআর