বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
সাইদুল ইসলাম সাঈদ:
স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরি হলেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে অনিহা বেশির ভাগ মানুষের। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। অথচ শিক্ষা জীবন নিয়ে হতাশা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে অহেতুক অনেক ভাবনা-চিন্তা এসে বাসা বাঁধে শিক্ষার্থীদের মনে। এমন নানামুখী মানসিক সংকটে ভোগা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে চলতি বছরের ৩১ জুলাই যাত্রা শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা কেন্দ্র। যেখানে কলেজের শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
শুভ নামে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবসময় সুস্থ থাকতে চাই। আমরা অসুস্থতা বলতে শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতাকেই বুঝি। যার ফলে মানসিক অসুস্থতাকে আমরা কেউই তেমন গুরুত্ব দেই না। মানসিক অসুস্থতার কারণে একসময় মানুষ স্বাভাবিক জীবন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। তিতুমীর কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম ম্যাম শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন তারমধ্যে অন্যতম হলো ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান রাকিব বলেন, ‘তিতুমীর ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা কেন্দ্র আছে এটা সকল শিক্ষার্থীরা জানেনা। এজন্য প্রতিটা ক্লাসে ক্লাসে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং সেমিনারের আয়োজন করা যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকবে। যারা দায়িত্বে আছেন শুধু তাদের দায়ভার না, এটা তিতুমীর ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়ভার।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ সরদার সোহাগ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র চালু হওয়াতে আমি খুবই আনন্দিত তবে এই উদ্যোগটা আরো আগে নেয়া দরকার ছিল, ধন্যবাদ কলেজ প্রশাসনকে।’
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ঘোষণা দিয়েছেন যে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম একটি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা কেন্দ্র থাকবে তার কারণ হচ্ছে, আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি নানাবিদ কারণে মানসিক সমস্যায় রয়েছি। দেখা গেছে আমাদের বন্ধু-বান্ধব,পরিবার-পরিজন কারো সাথে যে বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারি না তা ক্যাম্পাস মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শেয়ার করতে পারবেন। আপনারা যারা শিক্ষার্থীবৃন্দ আছেন আপনারা সকলেই পারিবারিক সমস্যা,নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে বলতে পারেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘প্রতিনিয়ত শারিরীকভাবে অসুস্থ হলেই আমরা ডাক্তারের কাছে যাই কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে কোনো খেয়াল রাখি না। শরীর এবং মন মিলিয়েই একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়। একটা প্রচলিত ধারণা মানসিক স্বাস্থ্য বলতেই আমরা মানসিক রোগ মনে করি। শিক্ষার্থীদের এটা মনে রাখতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য মানসিক রোগ নয়। সংকোচ না রেখে সকল শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র থেকে কাউন্সিলিং নেয়ার জন্য বলেন তিনি।’
মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্রের কাউন্সিলিং এর দায়িত্বে থাকা আফরিন খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সেবা নিতে আসা মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। এর মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতায় ছিল ৩-৪ জন যাদের ফ্যামিলি মেম্বাররা এখানে নিয়ে আসছেন। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা বা কাউন্সিলিং করে আরো উপরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাজেস্ট করে দিছি তারা এখন ভালো আছে। অর্থ সমস্যার জন্য চাপে আছে এমন শিক্ষার্থী ৫-৬ আসছে। আর সাধারণ দুশ্চিন্তা নিয়ে শেয়ার করছে এমন বেশ কিছু শিক্ষার্থী।’
তিনি জানান, প্রতি সোমবার ও বুধবার দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা প্রদান করা হয়।
এমআই