মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আনন্দ-বেদনার সংগ্রামী গল্প তুলে ধরে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ভাটির টানে, বাদার গানে’ শীর্ষক প্রদর্শনী। বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাঘ বিধবা সোনাভানু ও ঘূর্ণিঝড় আইলার সময়ে উপকূলে জন্মগ্রহণকারী শিশু বন্যা।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে মিশে থাকা নানা পণ্য প্রদর্শন করা হয়। এতে শোভা পায় সুন্দরবনের গোলফল, গোলপাতা, মধু, মোম, বাঁশি, জাল, খারা, স্থানীয় ১৫০ প্রজাতির ধানবীজ, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাঁশ ও বেতের তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, পরিবেশ বান্ধব বন্ধু চুলা, কুড়িয়ে পাওয়া পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি তেলাকুচা, শাপলা, সজিনা, হেলেঞ্চা, মালঞ্চ, কচুফুল, ডুমুর, তিতবেগুন, ব্রাহ্মী, কলার মোচাসহ উপকূলের বৈচিত্র্যময় পণ্যসামগ্রী।
অনুষ্ঠানে নৃত্যের তালে, গানের সুরে ও নাটকের অভিনয়ে ফুটে ওঠে উপকূলীয় মানুষের জীবন সংগ্রামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। শিশু কিশোর যুব বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীর মানুষ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে হৃদয়হরা এ অনুষ্ঠানে।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন ও সুন্দরবন সুরক্ষায় যুবদের ভূমিকা শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। কৃষি জমি সুরক্ষার দাবি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় নাগরিক সংলাপ। মঞ্চস্থ হয় পথনাটক, পরিবেশিত হয় উপকূলীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ। অনুষ্ঠানে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ হাসি কান্না মান-অভিমানের গল্প তুলে ধরেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
অনুষ্ঠানে শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি, চ্যানেল আই কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দ্লু হামিদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডঃ আবুল কালাম আজাদ, সনাক সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার, মানবাধিকার কর্মী মাধব দত্ত, নাগরিক নেতা আলী নূর খান বাবুল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, কৃষক আশরাফ হোসেন, সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বারসিক-এর আঞ্চলিক সসমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, জেলা সমন্বয়কারী মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পরিবেশ ও কৃষি জমি রক্ষায় প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের সকল ধরনের কৃষিজমি রক্ষা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলের বাইরে কৃষি জমিতে যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত, কৃষি জমিতে ইট ভাটা নির্মাণ বন্ধ ঘোষণা, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই, কৃষিজমি রক্ষায় অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, দালানকোটা, বাসভবন নির্মাণ বন্ধ করাসহ নানা দাবি জানানো হয়।
সবশেষে উপকূল ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। এতে উপকূলের মানুষের জানমালের সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জলবায়ুর সুবিচার, পরিবেশ ও সুন্দরবন সুরক্ষার দাবি জানানো হয়।
সময় জার্নাল/এলআর