এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের খাউলিয়া ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার বই বিতরণে চরম অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে অন্যের নামে বয়স্ক ভাতার বই বানানো। ২ বছরের প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকার নেই কোন হদিস ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেই কোন তদারকি।
ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল খায়ের হাওলাদারের বিরুদ্ধে রয়েছে ভাতা বই বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ। স্থানীয় সংসদ সদস্য’র বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বরিশাল গ্রামের বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী আম্বিয়া খাতুন(৮০) ভাতাপ্রাপ্ত বই নং-৭০, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল ১৭ই এপ্রিল সর্বশেষ ভাতা উত্তালন করেন। পরবর্তীতে সে জানতে পারে তাকে মৃত দেখিয়ে তার বই ফাসিয়াতলা গ্রামের জাহানুর বেগমের নামে করা হয়েছে।
একই ভাবে পূর্বচিপা বারইখালী গ্রামের বিধবা রাবেয়া বেগম(৫৫), ভাতাপ্রাপ্ত বই নং-২৭, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ৩ কিস্তিতে ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে। ২০২০ সালে সে জানতে পারে তাকে মৃত দেখিয়ে তার ভাতাপ্রাপ্ত বইটি চালিতা বুনিয়া গ্রামের শাহানাজ বেগমের নামে হয়েছে, এ শাহানাজ বেগম বিবাহিত।
অনুরুপ সন্ন্যাসী গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু সাদেক হাওলাদার(৫০)। প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাপ্রাপ্ত বই নং-১১২১, ২০১৫ সালের ২ জুলাই তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতার বই হয়।
অথচ প্রতিবন্ধী সাদেক বিষয়টি জানেন না। পরবর্তীতে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে খোজ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে এসে জানতে পারেন তিনি ২০১৫ সালে ভাতার সুবিধায় এসেছেন। তার প্রাপ্ত সুবিধার টাকা উত্তোলন করেছে অন্যরা। তাৎক্ষনিক চেয়ারম্যানের মাধ্যেমে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মোড়েলগঞ্জ থানায় বই হারিয়ে যাওয়ার সাধারণ ডায়েরি করেন, যার নং-৯০২। পরবর্তীতে ওই প্রতিবন্ধী ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রথম টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু বিগত ২ বছরের টাকার হদিস মেলেনি তার।
প্রতিবন্ধী আবু সাদেক হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমার ৪ ছেলে মেয়ে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। মাথাগোজার ঠাইটুকু নেই। জন্ম থেকে দু’টি চোঁখেই দেখিনা। আমাদের মত গরিবের ২ বছরের টাকা মেরে খায়, তাদের বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। টাকা ফেরৎ পেতে এ জন্য এমপি'র বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী আম্বিয়া খাতুন ও বিধবা রাবিয়া বেগম বলেন, টাকার বিনিয়ম কিভাবে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে আরেক জনের নামে বই দেওয়া হয়েছে। গরিবের কথা কেউ শোনেনা। টাকা হলে সব সম্ভব।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী মো. ওহিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ভাতা বই যাচাই বাচাইয়ে সুবিধাভোগীরা ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন(এমআইএস) না করার কারনে এ ত্রুটি হতে পারে।
ইউনিয়ন ভাতা কার্যক্রম প্রস্তুতকরন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল খায়ের বলেন, 'ভাতা বই বিতরনে অনিয়ম হয়নি'।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হান কবীর বলেন, ভাতা বই বিতরণে সংশ্লিষ্ট অনিয়মের বিষয় তিনি অবহিত নয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময় জার্নাল/ এমআই