মো. কামরুল হুসাইন : দেশরত্ন শেখ হাসিনার দুর্বার পথ চলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। পুরো দেশেই তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া এখন সকলের হাতের মুঠোয়। আপনি কোন সমস্যায় পড়েছেন,নিজের পাবলিসিটি চান কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য কায়েম করার জন্য প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজেকে ভালো হিসেবে জাহির করতে চান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করা শুরু করুন, কিছু নেগেটিভ বক্তব্য বা ইফেক্ট ব্যবহার করেন, মূহুর্তে ভাইরাল হয়ে যাবেন, একপক্ষ আপনাকে গালি অন্যপক্ষ আপনাকে সাধুবাদ , বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাই চালচিত্র।
ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, সারাদেশে ফোর জি নেটওয়ার্ক, স্বল্পমূল্যে হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোন, সহজলভ্য ইন্টারনেট , হাজার চেষ্টা করেও কারও অন্যায় গোপন থাকছে না। যে কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে,, একেকটি মুঠোফোন যেন নিউজ চ্যানেল হয়ে গেছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের স্রোতে বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা, রয়েছে পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া।। সামাজিকতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, সকলের জীবন মুঠোফোন কিংবা কম্পিউটারে ঢুকে গেছে। বছর দশেক আগেও শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্র সামাজিক বন্ধনের অপূর্ব মেলবন্ধন ছিল, একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা ছিল। পারিবারিক আড্ডা, খেলার মাঠে পাড়া-মহল্লার সকলের একত্রিত হয়ে খেলাধুলা, যাত্রা-পালা-নাটক, জারি-সারি-বাউল গানের সমন্বয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সমন্বয় বহমান। সর্বশেষ দশকে বিশেষ করে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতে ঘটেছে বিশাল বিপ্লব, সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকহারে প্রবেশ করে প্রযুক্তি। আগের মতো অধীর আগ্রহে সামনাসামনি দেখা করা, একসাথে সকলে আড্ডায় মেতে উঠা, একে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকার প্রচলিত সামাজিকতা যেন আজ বিলীনের মুখে। সবাই আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার চেষ্টায় ব্যাকুল। সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সৌহার্দ্যতা বিনিময়ে মূল্যবোধ হচ্ছে বিপর্যয়ের সম্মুখীন।এককথায় প্রযুক্তির উন্নয়নে দিন দিন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ। ফলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান তথা ধৈর্য, ত্যাগ,আত্মসংযম হুমকির মুখোমুখি।
ব্যবসায়ী আদম তমিজি দিয়ে শুরু করা যাক, যিনি দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১৭সালের দিকে হঠাৎ করে ঢাকার বুকে কোলাহল সৃষ্টি করে আসেন রাজনীতিতে,মানবতার বার্তা নিয়ে ছুটে চলেন দেশব্যাপী। সকলে স্বাগতম জানালো, হঠাৎ উনার খায়েশ জাগল রাজনীতি করবেন, দুই হাত উজাড় করে দান খয়রাত শুরু করেন। আমাদের দেশের যারা প্রচলিত রাজনীতিকে ঘৃণা করেন,তাদের অনেকেই এটাও বলেছিলেন, তমিজি হক অকারণে টাকা খরচ করছেন। রাজনীতিবিদেরা হয়তো তার টাকা পয়সা খরচ করে রাস্তায় নামিয়ে দিবেন। কিন্তু আদম তমিজির বেলায় ঘটেছে পুরো উল্টো। উনি নিজেই মানবতার সাইনবোর্ডের আড়ালে রাজনীতিকে ঘোল খাইয়ে পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের মিশনে নেমেছিলেন, নিজের আপন চাচা যাদের শ্রমে-ঘামে স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়েছে তাদের সাথে প্রতারণা করেছেন, বাড়িছাড়া করেছেন নিজের আপন ছোট তিন বোন কে, এটাত সামান্য নমুনা। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, মৃত্যুশয্যাশায়ী পিতাকে জিম্মি করে সম্পত্তি আত্মসাতের মিশনে নেমেছিলেন, উনার পিতার মৃত্যু সম্পর্কেও কানাঘুষা বিদ্যমান। রাজনীতির উপর ভর করে একটি স্বনামধন্য শিল্প পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি আত্মসাতের যে পরিকল্পনা করেছেন, তা বেশিদিন স্থায়ী হয় নি, কারণ বাংলাদেশের শাসনভার দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় কারও অন্যায় করে, মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নাই। তাইতো হাজার চেষ্টা করেও, যখন নিজের অসৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে গেল, ফেসবুক লাইভে এসে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে দিলেন। কত বড় দৃষ্টতা, কত বড় দুঃসাহস!
হয়তো ভেবেছিলেন, পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলে নিজেকে সাধু প্রমাণ করে দেশের মানুষ আবেগ নিয়ে দেশের আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। যে দেশ ৩০লক্ষ শহীদ আর ২লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন হয়, সেই দেশের মানুষ তাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচয় নির্ধারক পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় উল্টো আরও প্রত্যাখ্যান করে তমিজি নামক প্রতারক, লুটতরাজকে, নিন্দার ঝড় তুলেছে। বিপর্যস্ত মানসিকতার চার বিয়ে করা তমিজি সর্বত্র প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করছে। কিন্তু সে তো একটা দেশদ্রোহী, উল্টো দেশের প্রচলিত রীতিনীতিকে কলুষিত করেছে। তার প্রতি কোনও ক্ষমা নয়, অবিলম্বে তাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হোক।তা নাহলে, যারা যুগে যুগে স্বাধীন বাংলাদেশ তথা এই দেশের নিজস্ব পরিচয়ের নিজেদের আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, দেশদ্রোহিতার মতো কঠোর অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে, প্রতারণা, লুটতরাজকে উৎসাহিত করা হবে। প্রযুক্তির কল্যাণে উক্ত দেশদ্রোহিতার স্বাক্ষী প্রজন্ম থেকে হারিয়ে যাবে দেশপ্রেম, সামাজিক মূল্যবোধে ঘটবে বিপর্যয়। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে যারা উচ্চবর্গীয় আছেন, তাদেরও সতর্ক হতে হবে। যে সেক্টরে আছেন তাকে সেখানেই ভালো মানায়। হুট করে করে অন্যদিক থেকে আসা নতুনদের মাঝে যতই চাকচিক্য থাকুক, মূলস্রোতে টেনে নেওয়ার আগে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে । কারণ, এক তমিজি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, মূল্যবোধের বিপর্যয়ের কারণে দেশদ্রোহিতার মতো অপরাধ করেও ক্ষমা চেয়ে পার পেতে চায়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাগুলোর দিকে নজর দিলেই ফুটে উঠবে দেশের মানুষের মূল্যবোধের চিত্রগুলো যেমন: জুনিয়র ক্রিকেটার সাকিবের নারী, জাতীয় পতাকা ও সংগীতকে অসম্মান, রাজ-পরীর বিচ্ছেদ, ভিসির তালেবানি নিয়ম প্রভৃতি একই সূত্রে গাঁথা। প্রত্যেকটি ঘটনার একটি সুষ্ঠু সমাধান আছে, সময়ের আবর্তনে ফলাফল ভোগ করতেও হবে।
বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ রয়ে । কারও প্রচলিত আইনের অপব্যবহার করে অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নাই। দেশের আইন যেমন কোন অপরাধীকে ছাড় দিবে না, তেমনি মূল্যবোধকে সঠিক ও সময়োপযোগী করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। প্রযুক্তির কল্যাণে পুরো দুনিয়া হাতের মুঠোয় চলে এসেছে বিনিময়ে সামাজিকতা কে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের চিত্র পুরোদেশব্যাপী দৃশ্যমান, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে পাশাপাশি মূল্যবোধ বিকাশের দিকেও নজর দেওয়ার বিকল্প নাই। সঠিক মূল্যবোধের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে, বিকৃত মানষিকতার অধিকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে কারণ একটি সভ্য সমাজের মানদণ্ড নির্ধারিত করে মূল্যবোধ।
লেখক : মো. কামরুল হুসাইন
সহ-সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ