আল জাবের রাফি, বুটেক্স প্রতিনিধি:
দীর্ঘ দুই বছর অপেক্ষার পর, চলতি মাসের ১৯ তারিখ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) একাডেমিক ভবনের ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন হয়। এর আগে পুরাতন ক্যান্টিনে খাবারের মান ও পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগে তা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নতুন ক্যাফেটেরিয়া চালুতে শিক্ষার্থীরা খুশি হলেও দাম নিয়ে ক্ষোভ দেখা যায় তাদের মাঝে।
খাবারের মূল্য তালিকা হতে কিছু খাবারের দাম ঠিক থাকলেও বেশি প্রচলিত খাবারের মধ্যে বেশকিছু খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অর্জন রায় বলেন, এখানে মুরগী-ভাতের দাম ৬৫ টাকা, যা আজীজ হলের ক্যান্টিনে একই দামে খাবারের মান খারাপ ও পরিমাণে কম। তবে অন্যান্য খাবার যেমন ডিম-খিচুরির দাম যে ৬৫ টাকা তা গ্রহণযোগ্য না। বড়জোর ৫০ টাকা হতে পারতো।
অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিন নিহাল জানান, আগের ক্যান্টিনের রান্নাঘর এবং পরিবেশ ছিলো বেশ অস্বাস্থ্যকর, আসন সংখ্যাও কম ছিলো। অনেক সময় খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের বাহিরে যাওয়া লাগতো। নতুন ক্যাফেটেরিয়ার আসন সংখ্যা বেশি, পরিবেশ ভালো আর খাবারের মানও তুলনামূলক ভালো। কিন্তু খাবারের দাম আমার কাছে একদম শিক্ষার্থীবান্ধব মনে হয়নি। কেউ যদি আলু ভর্তা, ডিম দিয়েও ভাত খেতে চায় তাকে ৬০ টাকার মত খরচ করতে হয়। আবার যদি খিচুরির সাথে চিকেন নেয় তাহলে ৯০ টাকার মত খরচ হয়। সাধ্যের বাইরে গিয়ে বাড়তি দামে প্রতিদিন খাবার খাওয়া অনেকের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব।
ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দামের পাশাপাশি খাদ্য তালিকা অনুযায়ী সবগুলো খাবার না পাওয়া, খাবার বিতরণ ও হাত ধোঁয়া ব্যবস্থা নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে। খাবারের মান নিয়ে এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের হিমু চৌধুরী বলেন, খাবারের মান ক্যাফেটেরিয়া যখন চালু হয়েছে সে তুলনায় দিনে–দিনে মান খারাপ হচ্ছে। তাছাড়া খাবার নেওয়ার সময় তাদের অব্যবস্থাপনার জন্য টোকেন নিতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়।
৪৬তম ব্যাচের ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত আদনান বলেন, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে নাই। এতে ফ্লোরের ওয়াশরুমের দিকে গিয়ে কাজ সাড়া লাগে। আর সেখানে হ্যান্ড ওয়াশের ব্যবস্থাও নাই।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আল রুবাইন হাসান নিলয় বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী একটু কম দামে খাওয়ার জন্য যায়। কিন্তু দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের খাওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পরতে হচ্ছে। ভার্সিটি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্বল্পমুল্যে খাবার খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেয়।
এছাড়া, শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাফেটেরিয়া হিসেবে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভর্তূকি পাওয়ার কথা, খাবারের দাম যদি বাইরের রেস্টুরেন্টের মতোই হয় তাহলে ভর্তূকি টা আদৌ যাচ্ছে কোথায়?
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্যাফেটেরিয়া পরিচালক জাহানারা খানম বলেন, সব খাবার পেতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর খাবারের দাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ঠিক করা হয়েছে। আর টোকেনের ব্যবস্থা কম্পিটারাউজ করা হবে।
খাবারের দামের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্যাফেটেরিয়া কমিটির সদস্য ড. মো. সাইদুজ্জামান বলেন, মূল্য এখনও চূড়ান্ত না। ক্যাফেটেরিয়া শুরু করার পূর্বে মূল্য নির্ধারণ নিয়ে মালিকের সাথে যে চুক্তি হয়েছে তা এখনও বাস্তবায়িত হয় নি। কথা ছিল প্রতিবেলা খাবারকে প্যাকেজের আওতায় আনা হবে এবং সেই প্যাকেজের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ হবে যেন সকল শিক্ষার্থীর সাধ্যের মধ্যে থাকে।
ক্যাফেটেরিয়ার পরিপূর্ণ গুছাতে তাদের কিছুটা সময় দেওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করে তিনি বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা তাদের নির্দেশিত মূল্যে খাবার পরিবেশন শুরু করবে। তিনি খাবারের মান, দাম এবং পরিবেশ নিয়ে নিয়মিত নজরদারি করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ক্যাফেটেরিয়া কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. মাসুম বলেন, অন্যান্য জায়গায় খাবারের পরিমাণ ও এর মূল্য তালিকা দেখে এখানে যেসব খাবারের দাম বেশি সেসব খাবারের দাম কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, খাবারের দাম সাধ্যের মধ্যে এনে হাত ধোয়ার বেসিন সহ পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় যেন শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়।
এমআই