দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
‘জলের রানি পদ্মফুল’। জলাভূমিতে তার অপার সৌন্দর্যের সম্ভার দিয়ে মানুষকে করছে মোহিত। গোপালগঞ্জে সদর বলাকইড় পদ্মবিলের বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে ফুটন্ত পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখার মতো। এখানে শুধুই বর্নিল পদ্ম ফুলের সমারোহ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই জলাভূমি দেখতে আপনাকে আসতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত নিজ জেলা গোপালগঞ্জে। এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া লাল, গোলাপি ও সাদা পদ্মফুলে স্নেহের চাদর বিছানো আছে পরম মমতায় ।
দূর থেকে তাকালে মনে হবে বিলের কালো পানিতে কেউ যেন হাতে ধরে মায়ের মমতায় সবুজ জমিনে হরেক রকম পদ্মফুল সাজিয়ে রেখেছেন । এ যেন অপরূপ ও মনোহর পদ্মমেলা।
গোপালগঞ্জের পদ্মবিল পর্যটকদের আনাগোনায় এখন মুখরিত। প্রতিদিনই প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা উপভোগ করতে আসছেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। এ বিল পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে বিল এলাকার মানুষের সাধারণত কোনো কাজ থাকে না। আর অখন্ড এ অবসরে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি ও নৌকায় করে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে বাড়তি আয় হচ্ছে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষের।
গোপালগঞ্জ বিলবেষ্টিত জেলা। এখানে ২২৯ টি বিল রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম সদর উপজেলার বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে এ বিল অবস্থিত।
স্থানীয়রা জানান, আগে বিলে অল্প সংখ্যক পদ্ম ফুটত। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে বর্ষাকালে বিলে প্রাকৃতিকভাবেই হাজারো রংবেরঙের পদ্ম ফুটতে শুরু করে। আস্তে আস্তে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এ পদ্মবিলের অপার রূপের কথা।
বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিলের প্রায় পুরোটাজুড়েই ফোটে বিপুল সংখ্যক পদ্মফুল। এ ফুলে খেলা করে ভ্রমরসহ বিভিন্ন কীট পতঙ্গ। পূর্ব আকাশে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে বিলে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। তাঁদের পদচারনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখরিত থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বলাকইড় গ্রামের পদ্মবিলের চারদিকে ছড়িয়ে বয়েছে, লতা,পাতা, গুল্ম, কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ফুটেছে অগণিত পদ্ম। বিশাল এলাকাজুড়ে ফুঁটে থাকা লাল, গোলাপি আর সাদা রঙের পদ্ম রঙ্গিন আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মের স্নিগ্ধতার রং আর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার বিলের প্রকৃতি।
আর এমন অপরূপ সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিপাসুদের। জলের রানি পদ্মের শোভা দেখতে বলাকইড় বিলে প্রতিদিনই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করছেন অনেকে। বিভিন্ন শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেই আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। নৌকায় ঘুরে তাঁরা সৌন্দর্য উপভোগ করছেন ।
ভ্রমণপিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন স্থানীয়রা। পদ্মফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্মফুল সংগ্রহ করা হয়। এ ফুল বাজারে বিক্রি করছেন অনেকে। বিল এলাকায় ফুলের দাম কম। শহরে প্রতিটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এ ছাড়া পাইকাররা এ বিলের পদ্মফুল দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন ।
এ বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী খুলনার অনামিকা বিশ্বাস বলেন, ভূস্বর্গ কাশমিরের মতোই অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বলাকইড়ের পদ্মবিল। এ বিলের অপার প্রকৃতিক সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
গোপালগঞ্জ কালচারাল অফিসার ফারহান কবীর সিফাত বলেন, বর্ষাকাল আসলেই বলাকইড়ের পদ্মবিল এলাকা পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়। আনন্দে উৎসবে মেতে ওঠে দর্শনাথীরা।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শুধু সৌন্দর্যপিপাসু তৃষিত হৃদয়ের পরিতৃপ্তিই নয়; আমাদের দেশে পদ্মফুল যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়, তবে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এ ফুল থেকে জন্মানো ফলের বীজ একটি পুষ্টিকর খাবার।’
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম বলেন,পদ্মবিলকে ঘিরে বলাকইড়ে রাস্তা, বিশ্রামাগার, শৌচাগারসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সৃস্টি করা হয়েছে। এ কারণে পর্যটকরা সহজেই বিলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন।
সময় জার্নাল/এলআর