নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে গত জুন মাসে। এরপর প্রতি মাসেই তা আগের মাসের রেকর্ড ভঙ্গ করছে। সমাপ্ত হতে যাওয়া সেপ্টেম্বর মাসেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এক মাসে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু ও শনাক্ত আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ জনে। এর আগে আগস্টের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিল ৩৪২ জন। এ হিসেবে গত মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ৫৪ জন বেশি মারা গেছেন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জনে। আর আগস্ট মাসে এই সংখ্যাটি ছিল ৭১ হাজার। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সিংহভাগই হয়েছে গত দুই মাসে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮৯ জনে। গত একদিনে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪২৫ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৪০৬ জনে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের জুলাই মাস ছিল ভয়ংকর। আগস্ট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সেপ্টেম্বর সেই রেকর্ডও ভাঙে। মশানিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না গেলে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক পর্যায়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
শুধু ঢাকায় নয়, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর দেশব্যাপী গ্রামীণ এলাকায় এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে তীব্রহারে। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণের জন্য দায়ী ডমিনেন্ট স্ট্রেইন হলো এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য দায়ী ভেক্টর এডিস মশা। এ প্রজাতির মশার দুটি প্রধান স্ট্রেইন- এডিস অ্যাজিপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস।
কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস এজিপটির তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি জটিল। এই জটিলতার কারণে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। এডিস অ্যালবোপিকটাস সাধারণত প্রাকৃতিক জলাধারে বেড়ে ওঠে।
এমআই