নিজস্ব প্রতিবেদক:
অতিভারী বর্ষণে ভারতের উত্তর সিকিমের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও। তিস্তা অববাহিকার লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে বন্যার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানি মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অন্তত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের সিকিমে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার মাঝরাতের পর অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এতে তিস্তায় পানির পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। এ সময় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উত্তরাঞ্চরে তিস্তা নদী তীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সিকিমের বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার প্রভাব পড়ে তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলোতে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রচুর পানি তিস্তা নদী দিয়ে ভাটির দিকে চলে আসে। ফলে তিস্তার অববাহিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় পানি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, হঠাৎ আসা বন্যার পানিতে বুধবার উজানের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে যায়। এতে উত্তরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে পানি ভাটির দিকে নেমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ভাটির দিকে কাউনিয়া পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে আছে। সন্ধ্যা নাগাদ সেটাও কমে যাওয়ার আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
তবে আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, আগামী দু’দিন উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এতে করে বন্যার পানি খানিকটা বাড়তে পারে।
প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকারই সম্ভাবনা আছে। তবে পানি আবার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছে চলে আসতে পারে।
নিম্নচাপের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী দু’দিনও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ সময় উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতিকে কিছুটা প্রভাবিত করলেও তা খুব বেশি চিন্তার বিষয় নয়।
বুধবার সকাল থেকে তিস্তার উজানে পানির প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে দুপুর থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে লালমনিরহাট ও রংপুরের বেশ কিছু এলাকা বন্যা কবলিত হয়। একই সঙ্গে উজানের অংশে বাঁধ ভাঙার সাথে বৃষ্টিপাতও অব্যাহত আছে। এর ফলে যে পানি ইতোমধ্যেই এসেছে সেটার সঙ্গে বৃষ্টির পানি যোগ হয়ে দুই থেকে তিন দিন বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।
প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, এই মুহূর্তে কিছুটা কমের দিকে থাকলেও পানি আবার বাড়বে। দফয় দফায় থেমে থেমে বাড়বে। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধার কিছু অংশ অর্থাৎ তিস্তা অববাহিকার তীরবর্তী যে অঞ্চল আছে, সেগুলোকে স্বল্প থেকে মাঝারি মেয়াদের বন্যার আশঙ্কা আছে।
এমআই