আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর গাজা খালি করার ইসরাইলি নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, তারা তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করবে না। তারা হয় শত্রুদের পরাজিত করবেন, কিংবা নিজের বাড়িতেই মরবেন।
ইসরাইল উত্তর গাজার ১১ লাখ বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভূখণ্ডের দক্ষিঞ্চালয় ছেড়ে যেতে বলার প্রেক্ষাপটে হামাস এই মন্তব্য করল।
হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যুরোর প্রধান বাসেম নাইম বলেন, 'আমাদের কাছে মাত্র দুটি বিকল্প আছে : হয় এই দখলদারদের পরাজিত করা কিংবা আমাদের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করা।
তিনি বলেন, 'আমরা চলে যাব না। আমরা আরেকটি নাকবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে প্রস্তুত নই।' তিনি এ দিয়ে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় নৃশংসতার মুখে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত করার কথা উল্লেখ করেন।
নাইম বলেন, গত শনিবারের হামলাটি ছিল ১৭ বছর ধরে গাজাকে 'অবরুদ্ধ করে রাখার' ফল। তিনি বলেন, 'আমরা নীরবে মারা যাচ্ছি। আমরা উন্মুক্ত-কারাগার থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের কণ্ঠ পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমরা যা করছি, তা আত্মরক্ষামূলক কাজ। আমরা আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই। আমরা এই দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাই। এটা হলো এই অঞ্চলের সকল সমস্যার মূল কারণ।'
উত্তর গাজার ১১ লাখ বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভূখণ্ডের দক্ষিঞ্চালয় ছেড়ে যেতে বলেছে ইসরাইল। এদিকে মানবিক কারণে জাতিসঙ্ঘ এই আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার এএফপি’কে একথা বলেছেন।
গাজায় কর্মরত জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তাদের ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে ‘ওয়াদি গাজার উত্তরে গাজার সমগ্র জনসংখ্যাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
জাতিসং্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এএফপি’কে বলেছেন, এই এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ।
ডুজারিক বলেছেন, একই আদেশ স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ক্লিনিকসহ জাতিসঙ্ঘের সমস্ত কর্মী এবং জাতিসঙ্ঘের স্থাপনাগুলোতে আশ্রয়প্রাপ্তদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত ৪ লাখ ২৩ হাজার মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি লোককে আশ্রয় দিচ্ছে।
ওয়াদি গাজার উত্তরে বর্তমানে কতজন লোক অবস্থান করছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ডুজারিক বলেন, ‘বিধ্বংসী মানবিক পরিণতি ছাড়া এই ধরনের স্থানান্তর করা অসম্ভব বলে মনে করে জাতিসঙ্ঘ।’
‘একটি ট্র্যাজেডিকে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত হওয়া এড়াতে এই ধরনের যে কোনো আদেশ প্রত্যাহরে জাতিসংঘ দৃঢ় আবেদন জানায়। ইতিমধ্যেই সেখানে ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
গত শনিবার হামাসের হামলায় ১,২০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি মারা যায় এবং প্রায় ১৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে।
ইসরাইল প্রতিশোধ নিতে ২৩ লাখ লোকের একটি ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় ভয়াবহ বিমান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে। এতে ভবনগুলো মাটির সাথে মিশে যায়। এতে এই পর্যন্ত ইসরায়েল ১,৪০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক।
শুক্রবার এই সংঘর্ষের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর