মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা :
না, এই যুদ্ধে হামাস জেতেনি, ইসরায়েল হারেনি। ইসরায়েল এমনকি হারার ভয়েও সিজফায়ারে রাজি হয়নি। এবং আকসা বা শেখ জাররাহ বিষয়েও ইসরায়েল কোনো সমঝোতায় আসেনি। হামাস এবং ইসরায়েলের শক্তির মধ্যে পার্থক্য এত বেশি, হামাসের পক্ষে আসলে কোনোভাবেই ইসরায়েলকে হারানো সম্ভব না।
কিন্তু যেটা ঘটেছে সেটা হচ্ছে, এই যুদ্ধে ইসরায়েল নিজেও জিততে পারেনি। তার আগেই তাদেরকে অপারেশন শেষ করতে হয়েছে। এবং ইসরায়েলের না জিততে পারাটাই আসলে হামাসের, ফিলিস্তিনের জয়।
পরিসংখ্যান দেখেন, এর আগে ২০০৮ সালে প্রতি ১ জন ইসরায়েলির পরিবর্তে মারা গেছে ৮৯ জন ফিলিস্তিনি। ২০১২ সালে এই অনুপাত ছিল ১:৮০। ২০১৪ সালে ছিল ১:৩৪। আর এবার এই অনুপাত মাত্র ১:২১। ইসরায়েল টন টন বোমা ফেলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল, রিফিউজি ক্যাম সব ধ্বংস করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর বাইরে সামরিকভাবে তাদের বিশেষ কোনো অর্জন নাই।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং রাজপথ তো ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিলই, মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও অন্যান্যবারের মতো একচেটিয়াভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করতে পারেনি।
এবং খোদ আমেরিকার কয়েকজন কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটর এবার যেভাবে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে, সেটা ছিল অভূতপূর্ব। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না, বললেই ক্যারিয়ার শেষ - এরকম একটা বিশ্বাস যে আমেরিকান পলিটিশিয়ানদের ছিল, সেটা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
কোন সাংবাদিক বা অ্যানালিস্টের লেখায় যেন পড়লাম, সেই দিন আর নাই যে আমেরিকানদেরকে বোঝাতে হবে ইসরায়েল অন্যায় করছে। ওটা এখন সবাই জানে। এখন শুধু তাদেরকে কনভিন্স করতে হবে যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বললেও তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে না।
আশার বিষয়, এই জায়গায় ধীরে একটা পরিবর্তন আসছে। এবং এই পরিবর্তনটা যদি ধরে রাখা যায়, তাহলে দশ, পনেরো, বিশ বছর পর পরিস্থিতি আজ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে।
ফিলিস্তিন সংকট সহজে শেষ হবে না। কিন্তু সর্বাত্মক চেষ্টার কোনো বিকল্প নাই। অনেকেই ডগমাটিক বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকবে - কেবলমাত্র অমুক পদ্ধতিতেই আছে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান। কেবল ইমাম মাহদি বা দ্বিতীয় সালাহউদ্দিন আসলেই ফিলিস্তিন উদ্ধার হবে। এ ছাড়া অন্য কিছু করে কোনো লাভ নাই।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের লড়াই সব সময় বহুমুখী। একইসাথে ফিলিস্তিনিদের সামরিক সক্ষমতা অর্জন করে যেতে হবে, স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী কখনও শান্তিচুক্তি মেনে চুপ থাকতে হবে, কখনও পাল্টা রকেট হামলা করতে হবে, বর্ডারে গিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে যেতে হবে, বিডিএস ক্যাম্পেইন চালিয়ে যেতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়া এনগেজিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের জনমত পক্ষে আনার চেষ্টা করে যেতে হবে, ইওরোপ-আমেরিকায় এওসি-স্যান্ডার্সদের মতো পলিটিশিয়ানদেরকে সাপোর্ট করতে হবে এবং তাদের উপর ক্রমাগত চাপ দিয়ে যেতে হবে যেন তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে না যায়।
ইমাম মাহদি আসলে তো ভালোই, যতদিন না আসে, ততদিন এই বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে হিস্টরিক্যাল ফিলিস্তিন উদ্ধার করা না গেলেও ইসরায়েলি আগ্রাসন অন্তত ঠেকিয়ে রাখা যাবে, গ্রেটার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে তাদেরকে সরে আসতে বাধ্য করা যাবে।
সেটা কোনো অংশেই কম অর্জন না।