শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

চবিতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে অভিযুক্ত প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ

সোমবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
চবিতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে অভিযুক্ত প্রার্থীকে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ

মো. জাহিদুল হক, চবি প্রতিনিধি:

বিভাগীয় পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এক প্রার্থীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়োগ নিশ্চিত করতে বোর্ডে রাখা হয়নি বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ। বিতর্কিত এই শিক্ষক প্রার্থী হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অমর বনিক অর্ণব।

গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ডে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে তাকে সুপারিশ করা হয়। এমন প্রার্থীকে সুপারিশ করাতে সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের মতে, নকলের দায়ে অভিযুক্ত প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে, গত বছর মনোবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে আরও একজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অমর বণিক অর্ণব আবেদন করলে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সদস্য ও একজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ আনেন। বিষয়টি বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশে উল্লেখ করে দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, উক্ত প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিভাগের দুইটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, এই শিক্ষক প্রার্থীর বিরুদ্ধে দু’জন শিক্ষক নকল করার অভিযোগ এনেছেন। আমরা নকলের অভিযোগের বিষয়টি মন্তব্য হিসেবে বোর্ডে তুলে ধরেছি।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, অমর বণিক অর্ণব ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বর্ষের ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি টু (৪০৪) কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করেন। এরপর তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি (৪০৬) কোর্সের টিউটোরিয়ালে এমনকি বই খোলা রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষকের নিকট ধরা পড়েন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ তার উত্তরপত্র জব্দ করেন। এরপর তাকে মুচলেকা দিতে হয়।

বিভাগীয় পরীক্ষায় অমর বণিক অর্ণবের অসদুপায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার বলেন, অমর বণিক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালে আমার কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে।

অভিযুক্ত শিক্ষক প্রার্থী অমর বণিককে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন কোনো ধরনের ইনফরমেশন দিতে পারবো না। অন্য সময় আমি এ বিষয়ে যোগাযোগ করব।

পরে তার সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

বিতর্কিত শিক্ষক প্রার্থী অমর বণিক অর্ণবের নিয়োগ নিশ্চিত করতে বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির উপর চাপ ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বাহিরের চাপ সম্পর্কে মন্তব্য করতে সবাই নারাজ। কেউই মুখ খুলছেন না। তাছাড়া বিভাগের চেয়ারম্যানকে নোট অব ডিসেন্ট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, বাহিরের এক স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের মতো গুরুতর অভিযোগ থাকলেও প্ল্যানিং কমিটির সভায় বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রুমানা আক্তারকে নিজের পছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিতে বাধা দেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. অরুনাভ বৈরাগী।

এ বিষয়ে ড. অরুনাভ বৈরাগী ও চেয়ারম্যান ড. রুমানা আক্তারের মতামত জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই নিয়োগ প্রার্থীর পক্ষে সুপারিশের জন্য প্ল্যানিং কমিটির ওপর বাহির থেকে চাপ এসেছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য ড. মো: নুরুল ইসলাম বলেন, একটু চাপ ছিল। কিন্তু সরাসরি যে চাপ ছিল এমনটা বলা যাবে না।

প্রশাসনের পছন্দসই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে ভাইবা বোর্ডে রাখা হয়নি বিভাগ অথবা বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ। বোর্ডে ছিলেন জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস এর অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রুমানা আক্তার।

প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও গত বৃহস্পতিবার চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চৌধুরীর উপস্থিতিতে ভাইভা বোর্ডে অমর বণিক অর্ণবকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ সুপারিশ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটে এই প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদেরকে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

বিতর্কিত প্রার্থীকে সুপারিশের বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য দানেশ মিয়া বলেন, সিন্ডিকেট হওয়ার আগে আমি কোন ধরনের মন্তব্য করব না। এটা আইনত নিষিদ্ধ। তবে কে বা কারা সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

প্ল্যানিং কমিটির সদস্য ড. মো. শাহীনুর রহমান বলেন, এই প্রার্থীর পক্ষে সুপারিশের জন্য চাপ ছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার চৌধুরীর সাথে মোবাইলে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল