নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে এটি দেশের চিকিৎসা সেবার ইতিহাসে নতুন একটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সি-ব্লকে মা ও প্রসূতি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম টেস্টটিউব নবজাতকের সিজারিয়ান সেকশনের সময় অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের শিক্ষক নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেব্রবত বনিক, ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, নিউন্যাটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা দীবা, সহযোগী অধ্যাপক (অনারারী) ডা. শাহীন আরাসহ ১৭জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স অংশগ্রহণ করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিএসএমএমইউর ইতিহাসে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম দেওয়া বরিশালের বাসিন্দা নিঃসন্তান দম্পতি দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে ৮ বছর আগে দম্পতির রোগটি ডায়াগোনোসিস হয়। এ দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিরসনে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও কোনো সফলতা বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) সুপরামর্শও পাননি। পরে গত ২০২২ সালে এই দম্পতি বিএসএমএমইউর ইনফার্টিলিটি বিভাগে চিকিৎসা শুরু করেন।
পরিপূর্ণ ইভাউলিউশন শেষে এই বিভাগ তাকে আইভিএফ উইথ আইসিএসআই (ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন, যা আইসিএসআই নামে পরিচিত, ডিমের সাইটোপ্লাজমে শুক্রাণু কোষকে ইনজেকশন দেওয়ার একটি কৌশল। এই কৌশলটি আইভিএফের একটি বিশেষ রূপ যা পুরুষ-ফ্যাক্টর বন্ধ্যাত্বের গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়) এর পরামর্শ প্রদান করে এবং স্টেম সেল থেরাপির গ্রহণের মাধ্যমে তারা এ চিকিৎসা শুরু করেন। যথাযথ চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই নবজাতকের মা গর্ভধারণ করেন এবং নিয়মিত চেকআপে থাকেন। ৩৮ সপ্তাহের পর সুদীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বিএসএমএমইউর ইতিহাসে সফলতার নিদর্শন স্বরূপ আজকে ২৫ অক্টোবর সকালে এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্ম হয়।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ টেস্টটিউব নবজাতকের জন্মগ্রহণের মাধ্যমে আরেকটি সফলতার পালক যুক্ত হল। নিঃসন্তান দম্পতিদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর জন্য সব সময় কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফার্টিলিটি বিভাগ। টেস্টটিউব নবজাতকের জন্মগ্রহণে নিঃসন্তান দম্পতিদের সহযোগিতার জন্য বিএসএমএমইউর সামনের দিনগুলোতে আজকের দিনটি অনুপ্রেরণা যোগাবে। টেস্টটিউব নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন দেশের মাটিতে মানুষের সকল ধরনের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। এ বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে চলছে। এখানে ক্যাডাভেরিক, কিডনি, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, কর্নিয়া ট্রান্সপ্লান্ট, করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে।
এ সময় আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে দেশে একটি স্মার্ট হেলথ সিস্টেম চালু করার আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমদে।
এদিকে বিএসএমএমইউর রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগ জানায়, সাধারণত বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় শতকরা ৫-১০ শতাংশ রোগীদের আইভিএফ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিএসএমএমইউতে ইনফার্টিলিটি বিভাগ চালু হয়। তবে ২০১৯ সাল থেকে অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর তত্ত্বাবধানে টেস্টটিউব বেবির আইভিএফ পদ্ধতি পুরোদমে চালু হয়। করোনাকালীন সময়ে এই সেবা কিছুটা স্থগিত থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পরপর ২০২২ সালে পুনরায় আইভিএফ পদ্ধতি চালুর জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে রিপ্রোডাক্টিভ এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর নেতৃত্বে বন্ধ্যাত্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা স্টেম সেল থেরাপি, পিআরপি থেরাপী, রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি, এআরটি, আইইউআই, আইভিএফ সেবা প্রদান করে আসছে।
এমআই