মো. জাহিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি বেশ কয়েকটি দাবিতে উপাচার্যকে দেয়া দুই দফা আলটিমেটামের সময় শেষ হওয়ায় টানা তিন দিনের আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।
অডিও কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে ঘটনার মূল দোষীদের খুঁজে বের করা, সিন্ডিকেটে তিন ক্যাটাগরির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে উপাচার্যকে দুই দফা আলটিমেটাম দিয়েছিল চবি শিক্ষক সমিতি।
তবে দফায় দফায় আলটিমেটামে কোন দাবি পূরণ না হওয়ায় এবার মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৮ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংগঠনটি।
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক সই করা এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার তিন দিনের টানা কর্মসূচির বিস্তারিত জানানো হয়।
পূর্বনির্ধারিত তিনদিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- মঙ্গল ও বুধবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন। এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সকল সম্মানিত সদস্যকে জানানো যাচ্ছে যে, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতি চবি প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি, আইনের শাসন, শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উন্নয়নে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে বিভিন্ন দাবি জানানোর পাশাপাশি দাবিগুলো আদায় না হলে কয়েক দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে মর্মে আলটিমেটাম প্রদান করা হয়।
কিন্তু, চবি প্রশাসন অব্যাহতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্সেপ্ট পরিপন্থী উল্লিখিত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে গত ০৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ এই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে ডিন, প্রভোস্ট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের উদ্যোগ না নেয়া, শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত মামলা করে তথাকথিত নিয়োগ-বাণিজ্য চক্রের সাথে যুক্তদের খুঁজে বের করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা, বিভিন্ন বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত নির্বাচনী বোর্ড পুনর্গঠন না করা, বিভিন্ন বিভাগে আবেদনপত্রে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগসহ নানান কারণে বিতর্কিত আবেদনকারীদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দানের জন্য সুপারিশ করা, বিভিন্ন বিভাগ/ইনস্টিটিউটে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা কমিটি কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি/নিয়োগের সুপারিশ না থাকা কিংবা প্রয়োজন নেই মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান সত্ত্বেও অসংখ্য বিজ্ঞপ্তি প্রদান, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ, এড-হক/মাস্টার রোল/দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে গণহারে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগদান করে অপ্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির মত অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, পালি বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষক নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হকের বিরুদ্ধে গঠিত হয়রানিমূলক তদন্ত কমিটি বাতিল না করা, শিক্ষকদের জন্য এসি বাস না কেনা, আবাসিক হলে দীর্ঘদিন ধরে আসন বরাদ্দ না দেয়া, শাটল ট্রেনে বগি বাড়াতে উদ্যোগ না নেয়াসহ নানা বিষয়ে সংগঠনটি দাবি জানিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, এই কর্মসূচিটা গত ১৮ তারিখের সিদ্ধান্ত। আমরা প্রশাসনকে দুই দফা আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। প্রশাসন আমাদের দাবিগুলো পূরণের জন্য দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে আমরা দাবি পূরণের জন্য এবার টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের কর্মসূচিটা এখনও ঠিক আছে।
সময় জার্নাল/এলআর