নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপিকে ভোটে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক। আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারবো না।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘স্পেস ও টাইম’ সীমিত উল্লেখ করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবদমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের কোনো ম্যান্ডেট নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতি জানানোসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে এ কথা বলেন সিইসি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৬টির মতামত খুবই ইতিবাচক। নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনো অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।
সিইসি বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। ২৬টি দল আলোচনায় অংশ নিয়েছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন— অধিকাংশই আমাদের অবস্থানটা বুঝেছেন। নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়। কিছু কিছু দল এখনো অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।’
পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আর রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে আমরা বলেছি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সবসময় ইতিবাচক। কিন্তু সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্যটা আমাদের নেই বা আমাদের সে ম্যান্ডেটও নেই। আমরাও বলেছি- আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টা করতে পারতেন।’ দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
‘আমাদের নির্বাচন বিষয়ে আমাদের রাজনীতিতে বিদেশিরা এসে অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনারা এ দায়িত্বটা নিতে পারতেন। চেষ্টা করতে পারতেন নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার।
ভোটকে সামনে রেখে সময়ও ফুরিয়ে আসছে। সেইসঙ্গে ইসির বাধ্যবাধকতার কথাও স্মরণ করেন সিইসি। তিনি দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি-আমাদের স্পেস এবং টাইম সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে।’
দলগুলোও তা বুঝতে পেরেছে মনে করে সিইসি বলেন, ‘আমাদের পাশেও খুব বেশি স্পেস নেই, সামনেও খুব বেশি স্পেস নেই। পেছনেও খুব বেশি স্পেস নেই। আশা করি, আমাদের বক্তব্য তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাদের বক্তব্য হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি।’
সব দলের মতো বিএনপি ও অন্য দলগুলোকেও ভোটে আসার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান থেকে সবসময় বলে এসেছি- আমরা বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন চাই। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক।’
আন্দোলনে থাকা দলটির প্রতি শুভকামনা জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচন করবো। তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকেবে- আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারবো না। আপনারা আসুন, আমাদের শুভকামনা থাকবে। অংশগ্রহণ করে সফল হোক, সে শুভকামনা থাকবে।’
দলগুলো ভোটে অংশ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেবে আশা করে তিনি বলেন, ‘আমরা মতবিনিময় করেছি, যাতে আগামী নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। আমি এককভাবে সব করে দেবো তা নয়, তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আশাকরি, সবাই উজ্জীবিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হবেন।
পোলিং এজেন্ট নিয়ে নির্দেশনা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, কিছু কিছু আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানানো হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন নির্বাচন কমিশন এককভাবে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত। আমাদের সামর্থ্য সীমিত। আমরা নির্বাচনটা আয়োজন করি। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বটা আমাদের হস্তান্তর করে দিতে হয়। তাদের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য দলগুলোকে পরামর্শ দেন তিনি। ‘নজরদারি থাকতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের। দল, প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করলে সে আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে হবে অবশ্যই। পোলিং এজেন্ট দিয়ে তাদের অবশ্যই নিজ নিজ স্বার্থরক্ষা করতে হবে।’
এমআই