আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৬ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ধ্বংস হয়ে গেছে ৫৫টি মসজিদ, ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৩টি গির্জা।
গাজার প্রশাসনের বরাত দিয়ে রোববার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫০০ জনে। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। গাজা উপত্যকার সরকারি মিডিয়া অফিস শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
মিডিয়া অফিসের প্রধান সালামা মারুফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে নিহতের সংখ্যা ৯ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ শিশু এবং ২ হাজার ৫০৯ জন নারীও রয়েছেন।’
মারুফ আরও বলেছেন, ‘ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজায় ৫৫টি মসজিদ, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি গির্জা এবং গাজার এনডোমেন্টস ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
স্বাস্থ্যসেবা খাতে ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় ১০৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ১৬টি হাসপাতাল, ৩২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র এবং ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
মারুফের মতে, ইসরায়েলি অভিযানের ফলে সাড়ে ৮ হাজার বাড়ি ও ৪০ হাজার আবাসন ইউনিট ধ্বংস হয়েছে এবং ২ লাখ ২০ হাজার অন্যান্য ইউনিটের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ৮৮টি সরকারি সদর দপ্তর এবং ২২০টি স্কুলেরও ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি স্কুলের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী এই অঞ্চলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সফরের সাথে মিল রেখে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের অপরাধ ও হামলা আরও তীব্র করেছে। দখলদাররা (ইসরায়েল) অত্যধিক অপরাধ ও গণহত্যার মাধ্যমে উত্তর গাজা উপত্যকা এবং গাজা সিটিতে মানুষের জীবনকে শেষ করে দিতে চায়।’
গাজার হাসপাতালগুলোতে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে মারুফ ‘জীবন বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের’ আহ্বান জানান।
আনাদোলু বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতাল এবং স্কুলগুলোকে লক্ষ্য করেও হামলা হচ্ছে যেখানে কার্যত হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এসব স্থানে হামলার ফলে হাজারও মানুষ হতাহত হয়েছেন।
এদিকে শনিবার রাতে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের মাগাজি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানা গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার গাজা ভূখণ্ডের বুরেজ শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। গাজা সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র সেসময় বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্য গাজার এই শিবিরে আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু লোক চাপা পড়েন।
এছাড়া বুরেজে বোমা হামলার পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো জাবালিয়া ক্যাম্পেও হামলা চালায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১৯৫ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও ১২০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজার বাসিন্দারা বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। ভূখণ্ডটির ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজার অনেক হাসপাতাল পরিষেবার বাইরে চলে গেছে।
এসজে/আরইউ