লাবিন রহমান:
দাদীর বাবার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া। সে ছিল এক আনন্দ আয়োজন। নদীপথে সারাদিন। দাদী কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নিতেন। আর থাকতো চাল-ডাল। নৌকায় খিচুরি রান্না সাথে ডিম। সেসময় আমি ছিলাম বেশ ছোট। একটু বড় হয়ে রচনা লেখা শুরু করলাম, নৌভ্রমণ বা নদীপথে যাত্রা। আর এখন অফিশিয়াল ট্যুর, নদীপথে যাত্রার পোশাকি নাম রিভার ক্রজ। গত শুক্রবার এমনই এক আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করেছিলো সময় জার্নাল।
ওপরে নীল আকাশ। আকাশের নিচ দিয়ে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। কিছু দূর দূর থেকে দেখা যাচ্ছে আকাশে পাখি। জাহাজ চলছে। চলছে ছোট ছোট ডিংগি নৌকা। কোলাহল আর যানজটের শহর ঢাকা ছেড়ে এমন পরিবেশে একটা দিন কাটালাম আমরা সময় জার্নাল পরিবার। সময় জার্নাল পরিবারের সদস্যরা। তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে যুক্ত হয়েছিলেন তরুণ কবি, সাহিত্যিক, মঞ্চ অভিনেতাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর পাশেই শীতলক্ষা নদী। ঢাকাকে যেকয়টা নদী ঘিরে রেখেছে তার মধ্যে এটি একটি। শীতলক্ষার পাশে আমাদের অনেকগুলো শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠেছে। তবে এসব কল-কারখানার বর্জ্য, দখল অনেকটাই কেড়ে নিয়েছে নদীর সেই জৈালুষ। যা অবশিষ্ট আছে তাহলো ধীর গতিতে বয়ে চলা পানি, কচুরিপানা।
যানজটের শহর হিসেবে খ্যাতি রয়েছে কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরের। তার ওপর ঘনবসতিপূর্ণ মহানগর। চাকরিজীবীদের দুর্ভোগ টেনশন দিন দিন বেড়েই চলেছে । সময় স্বল্পতা ও কর্মব্যস্ততায় ভ্রমণের জন্য দেশের নানা প্রান্তে যেতে না পারলেও ঢাকার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে কিন্তু চাইলেই নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন।
নদীর উৎপত্তি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। নারায়ণগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গাজীপুর ও নরসিংদী জেলাকে পৃথক করেছে এটি। এক সময় এই অঞ্চলের রাজধানী সোনারগাঁও এই নদীর তীরেই গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে এর তীরে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা রয়েছে। ফলে নদীর পাশের দৃশ্যগুলো হয়েছে শহুরে এবং গ্রামীণ দৃশ্যপটের মিশেল। এই রুটে ট্রলার ও নৌকার পাশাপাশি ক্রুজও চলাচল করে।
জনপ্রিয় হচ্ছে এধরনরে রিভার ক্রুজ। ঢাকার শীতলক্ষ্যা নদীতেও ক্রুজ পরিচালনা করছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। শীতলক্ষ্যা ক্রুজগুলোর প্যাকেজের মধ্যে যাত্রীদের সকালে বাড়ি থেকে তুলে ডেমরা ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ক্রুজ যাত্রা। দুই পাশে নদী দেখাতে দেখাতে নামানো হবে মুড়াপাড়ার জমিদার বাড়িতে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রূপসী গ্রামের ঐতিহ্য জামদানিপল্লীতে। নদীতে গোসল আর মাছ ধরা শেষে বিকেলে পৌঁছে দেওয়া হয় যার যার বাড়িতে।
কর্মব্যস্ত নগর জীবনে এধরনরে নৌভ্রমণ আমাদের গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের সন্তানদের বিনোদন আরও দ্বিগুণ উপভোগ করতে পারে। এপথে তারা কচুরিপানার ফুল, তাঁতি, তাঁতে কিভাবে একটা জামদানি শাড়ি বুনা হয় এসব কিছু তারা দেখতে পারছে। শুধু বই মুখস্থ করে নৌভ্রমণ রচনা শেখা নয়, নিজের চোখে দেখতে ও শিখতে পারবে।
সময় জার্নাল/এলআর