মো. জাহিদুল হক:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য 'দিদার বাদশার পালা'।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চাট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর মহাজনের নির্দেশনায় মঞ্চায়ন হয় এই পালানাট্য।
জহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আফসার আহমদের সংগৃহীত গাজীর গানের কাহিনী নিয়ে রচিত এই পালায় দেখানো হয়, বৈরাত নগরের রাজা সেকান্দর বাদশা জানতে পারেন তার জায়গা দোযখে নির্ধারিত। এতে তার মনে অশান্তির ঝড় উঠে। তার মেজোপুত্র জনমতীকে কুরবানী দিলে তার মুক্তি মিলবে। একথা শুনে জনমতী পিতার জন্যে কুরবানী হতে রাজি হয় । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় জনমতী বাদশার স্ত্রী পঞ্চ তোলা সতী। এ নিয়ে জনমতী দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে সে কী করবে! এখান থেকে গল্পের শুরু এবং নানান বাঁধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে গল্প এগোতে থাকে। এক সময় দেখা যায় জনমতী তার বিবির পরামর্শে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যায়। সেখানে তার বিবি পঞ্চতোলা স্বামী হারা হয়। সরোবরে জল পান করতে গেলে একটা দৈত্যের সাথে যুদ্ধ হেরে তাকে দৈত্যের পেটে চলে যেতে হয়।
অন্যদিকে স্বামী হারা পঞ্চতোলার সন্তান জন্ম হয়। জনমতীর ভাই দয়াল গাজী তার নাম রাখেন দিদার বাদশা। এখান থেকে নাটকের মোড় ঘুরে ভিন্নরূপ নেয়। মাতৃভক্ত দিদার বুঝতে পারে না দেওরের চক্রান্তে তার মা আজ তারই প্রতিপক্ষ। দেওরের কথা মতে তার সন্তানকে হত্যা করে মা গহন দরিয়ায় ভাসিয়ে দেয়। পরে সাইঝা পরী তাকে খুঁজে পায় এবং মৃত্যুঞ্জয়ী মালা পরিয় পুনরায় জীবিত করে এবং মায়ের কাছে ফিরে আসে। সর্বশেষে দেখা যায় জনমতীকে দৈত্যের পেট থেকে উদ্ধার করা হয় এবং তার সন্তান ও স্ত্রীর সাথে মিলনের মাধ্যমে নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটে।
নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবীর মহাজন বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত প্রচুর নাটক নিয়ে কাজ করে। আজকের এই নাটকটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাটকের একটি। একসময় এরকম নাটক গ্রামে গঞ্জে মঞ্চায়িত হতো আর চারপাশের মানুষ বসে থেকে দেখত। সেই থেকে আমরা আজকে জারুলতলায় এ আয়োজন করেছি। শিক্ষার্থীরাও এ ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো আরোও ভালোভাবে বুঝতে পারে।
বিভাগটির সভাপতি শাকিলা তাসমিন বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল আজকের এই নাটক। এই জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটি ঐতিহ্যবাহী একটি ফর্ম, নতুন প্রজন্ম যাতে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারে এজন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বাইরে নাটকটি মমঞ্চায়নের ব্যবস্থা করেছি।
সময় জার্নাল/এলআর