সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে ৪৫ তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) দিবস। বুধবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম প্রশাসন ভবন চত্ত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে আনন্দের প্রতীক বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন ।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় জাতীয় সংগীতের সহিত জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান।
এসময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান, দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ছাত্রউপদেষ্টা সেলিনা নাসরিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসন ভবন চত্ত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও হলসমূহ স্ব-স্ব ব্যানারে অংশগ্রহন করেন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকলের মাঝে দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মৃত্যঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এদিকে বেলা ১১টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও স্টুডেন্ট ই-ব্যাংকিং সেবার কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এসময় অনুষ্ঠানে দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া।
সভায় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকি বিল্লাহ বিকুলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আগামী এক বছরের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা বদলে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৭টি ডেভেলপমেন্টাল কম্পোনেন্টের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১১ টি কাজ সম্পন্ন করেছি। আগামী এক বা দেড় বছরের মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত পরিবর্তন দেখতে পাবো। এতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট মিটাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। ক্লাসরুম সংকটও নিরসন হবে শীঘ্রই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রথম কাজ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে শেখানো। তাদের লেকচার দেওয়া নয়। আমরা যতই তাদের প্রশ্ন করতে শেখাবো ততই আমরাও একজন সমৃদ্ধ শিক্ষক হিসেবে নিজেদের মর্যাদাকে উপরে তুলে ধরতে পারব। আমরা যাদের পড়াচ্ছি, শিক্ষা দিচ্ছি, তাতের যদি আরো সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তারা অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।’ এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে আগামী বছর একটি সমাবর্তন আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অতিথিদের আলোচনা শেষে সেখানে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এসময় অ্যাপস এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের ফি পরিশোধ করা হয় এবং এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এদিকে অনুষ্ঠানের আগে মিলনায়তনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন বুনন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্থিরচিত্র নিয়ে তৈরি ফটোফ্রেম উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এসময় তার সাথে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠান শেষে ডায়না চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক এসোসিয়েশনের আয়োজিত ফটো প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং ঝিনাইদহ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত শান্তিডাঙ্গা ও দুলালপুরে ১৭৫ একর জায়গাজুড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠটি সর্বপ্রথম দুইটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগ, আটজন শিক্ষক ও ৩০০ ছাত্র নিয়ে এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সময় জার্নাল/এলআর