জোবায়ের আহমদ:
সমাজের মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানো তথা সুশিক্ষার কথা বিবেচনা করে, ‘এসো বই পড়ি, নিজেকে আলোকিত করি’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০১০ সনে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা মো. কামরুজ্জামান মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স (সিপিএস) বিভাগে অধ্যয়ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। মাভাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অপরাধ বিষয়ক গবেষণায় ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ স্থান অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরেছেন বিশ্বদরবারে। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এ কর্মরত রয়েছেন।
বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারে বই, পুস্তিকা, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন মো. কামরুজ্জামান যাতে সবাই এই উপকরণগুলোর সাহায্যে গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান করতে পারেন। পাঠাগারটিতে বই পড়া, জ্ঞান আহরণ তথা নতুন তথ্য অনুসন্ধানের জন্য প্রতিনিয়তই পাঠকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। যে কোন বয়সের নারী-পুরুষ এখানে এসে জ্ঞানের অতল সমুদ্রে অবগাহন করতে পারেন। আবার কেউ চাইলে নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে পাঠাগারের সদস্য হতে পারেন। কোন পাঠক ইচ্ছা করলে পাঠাগারে বসে বই পড়তে পারেন আবার চাইলে বাড়িতে নিয়েও পড়তে পারেন। জানা যায়, পাঠাগারটি পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে। তাদের সহযোগিতায় সদস্য হওয়া, বই নেয়া, বই ফেরৎ দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পন্ন হয়ে থাকে। তারাও তাদের কর্তব্য সুন্দরভাবে পালন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বই পড়ার মাধ্যমে অনেকেরই ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আজেবাজে আড্ডা না দিয়ে এই পাঠাগারে সময় দিচ্ছে যা তাদের বিভন্ন আসক্তি থেকে দূর রাখছে। গ্রন্থাগারটি পরিদর্শণ ও অনুসন্ধান করলে বুঝা যায় এর গভীরের সৌন্দর্য। পাঠাগারটির পাশাপাশি বাস স্ট্যান্ড অণু-পাঠাগার , রেল স্টেশন অণু-পাঠাগার, সেলুন অণু - পাঠাগার চালু করা হয়েছে। এ পাঠাগারের যাবতীয় কার্যক্রম সত্যিই অবাক হওয়ার মত। মূল পাঠাগার ছাড়াও অপেক্ষমাণ মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ৮ টি সেলুন অণু-পাঠাগার, ১ টি বাসস্ট্যান্ড অণু-পাঠাগার ও ১ টি স্টেশন অণু-পাঠাগার চালু করা হয়েছে।
পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, “অনেক মানুষ আছেন, যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তবে নিয়মিত বই কিনে পড়ার সামর্থ নেই তাদের জন্য সহজে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পাঠাগারটি শুধু বই পড়াকে ঘিরে নয়, আমরা বিনোদনের আয়োজনও করে থাকি। প্রতি বছর প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, বৃত্তি প্রদান, কবিতা আবৃতি, গান এবং কোরআন-এর হাফেজদের নিয়ে আল-কোরআন পাঠসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা সভা করা হয়ে থাকে।”
তিনি আরও জানান, “পাঠাগারের সংগ্রহে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ২৫০০ এর বেশী বই রয়েছে। যেমন-ধর্মীয়, সাহিত্য, বিজ্ঞানমনস্ক, ইতিহাসমূলক, জীবনী, চাকুরি পারীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, শিশু সাহিত্য ছাড়াও একাডেমিক বই বিদ্যমান। পাঠাগারটির উন্নয়নে যারা বই দিয়ে এবং বিভিন্ন সময় সুপরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”
মাভাবিপ্রবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাগর ঘোষ বলেন, “ আমার ভাইবা থাকায় সেলুনে চুল কাটতে গিয়ে দেখি নাপিত ২ জন চুল কাটছেন। বাকি যারা সিরিয়ালে রয়েছেন, বেন্ঞ্চে বসে সবাই গল্পের বই ও পত্রিকা পড়ছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সেলুনে পাঠাগার! তখন জানতে পারলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর পাঠাগার তৈরীর গল্প। তাই আশা করি, এভাবেই এগিয়ে যাবে ‘বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার’ চারদিকে ছড়াবে জ্ঞানের আলো। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে এই পাঠাগারটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ”
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামান জানান, "বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগটি অনেক মহৎ উদ্যোগ। আমরা এই উদ্যোগের সাধুবাদ জানাই। আমরা পাঠাগারটির পাশে থাকবো। আমরা চাই এমন উদ্যোগ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক। "
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা জানান, "ভবিষ্যতে পাঠাগারের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ভবন নির্মাণসহ বইয়ের সংগ্রহ আরও বেশি সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজের বিবিধ সমস্যাগুলো সমাধানেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে। তাই আশা করি আমাদের সহযোগিতায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি, সংগঠন যদি এগিয়ে আসে তাহলে পাঠাগারের কার্যক্রমের পাশাপাশি মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা বিলুপ্তকরণসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে।”
এমআই