সাইদ আহম্মদ, বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা:
বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে চারটি অনুষদ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন কৃষি অনুষদে।অথচ কৃষি অনুষদে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা ক্লাসরুম গুলোর অবস্থা শোচনীয়। প্রায় ১০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্লাসরুম গুলোর কোনোটিতেই নেই সাউন্ড সিস্টেম। এছাড়াও অনুষদটিতে নেই পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত সাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর কৃষি অনুষদে এত অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কৃষি অনুষদে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রী বাড়লেও বাড়েনি শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা এবং পরিবর্তন হয়নি শ্রেনীকক্ষের মানের। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস না হওয়ার ঘটনাও দেখা যায় কৃষি অনুষদে। ফলে বেড়ে চলছে সেশনজটের শঙ্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে প্রাচীন ভবনে কৃষি অনুষদের ক্লাস পরিচালনা করা হয়ে থাকে ।তিনতলা বিশিষ্ট এ কৃষি অনুষদ ভবনে রয়েছে ২৩টির বেশি শ্রেণিকক্ষ। এরমধ্যে সাতটি তাত্ত্বিক এবং প্রতিটি বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ১৬ এর অধিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অধিকাংশ জায়গাজুড়ে শিক্ষকদের কক্ষ।
তাত্ত্বিক ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রায় ১০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্লাস সংখ্যা ৭ টি। যার একটিতেও নেই কোনো সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা। এছাড়াও শ্রেণীকক্ষে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদ্যুতিক বাতি। এরমধ্যে পুরোনো হওয়ায় প্রজেক্টরের পর্দা কালো রং ধারণ করেছে। প্রজেক্টরের সঙ্গে স্ক্রিনের আনুপাতিক দূরত্ব ঠিক না থাকায় লেখা ছোট দেখেন পেছনের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় শিক্ষকের লেকচারও বুঝতে পারেননা শিক্ষার্থীরা। অনেক শ্রেণিকক্ষের সিলিং থেকে খসে পড়ছে সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ। এরই মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল ফয়েজ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, "আমাদের ক্লাসরুমগুলো একটু বড় এবং বেশি শিক্ষার্থী থাকে। এজন্য ক্লাসরুমগুলোতে সাউন্ড সিস্টেম থাকাটা খুব প্রয়োজন। আমরা যে বিষয়গুলো পাঠদান করে থাকি, অনেক সময়ই পেছনে থাকা শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিতে পারে না। এছাড়াও আমাদের দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে লেকচার দিতে হয়। এতে শিক্ষকদেরও অসুবিধা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ না করে দিতে পারলে পাঠদান ফলপ্রসূ করা কঠিন। ক্লাসরুম গুলোতে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টেরেও অনেক সময় সমস্যা করে থাকে।"
সরেজমিনে দেখা যায়, অনুষদ ভবনে ৭ টি শ্রেণি কক্ষের জন্য রয়েছে একটি খাবার পানির ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে সেটিও নষ্ট থাকে। এছাড়াও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ছোট্ট একটি কমন রুম ও একটি ওয়াশরুম। অন্যদিকে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র দুইটি ওয়াশরুম। ১২ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ভবনে মাত্র একটি খাবার পানির ব্যবস্থা ও তিনটি ওয়াশরুম আছে ।এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাল করেছেন শিক্ষার্থীরা ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, কৃষি অনুষদের কোনো তাত্ত্বিক শ্রেণিকক্ষেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা নেই। ফলে গরমের মধ্যেও অস্বস্তিকর পরিবেশে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। পানির জন্য একটা ফিল্টার আছে, যা মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া শৌচাগারের ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রয়োজন হলে যেতে হয় তিন তলায়, আবার সেগুলোও বেশিরভাগ সময় ব্যবহার অনুপযুক্ত থাকে।
এ বিষয়ে শেকৃবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড অলোক কুমার পাল বলেন, " আমরা দ্রুতই ক্লাস রুমে সাউন্ড সিস্টেম এর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ বা ৪ টি ক্লাস এ তা করা হবে। এছাড়াও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করার চিন্তাও রেখেছে। কৃষি অনুষদ এ ওয়াশরুম বৃদ্ধিরও চেষ্টা করছি। এজন্য কয়েকটি বিভাগের সাথে দ্রুতই বসবো আমরা।
এমআই