বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা:
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদের গলায় রামদা ঠেকিয়ে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে হলটির ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সজীব হোসাইন ও সাধারন সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফের বিরুদ্ধে। এমনকি চাঁদা না দিলে গুম-হত্যার হুমকির অভিযোগও এসেছে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে,কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২২০ নাম্বর রুমে হল সেক্রেটারী আরিফ এবং ২১৯ নাম্বার রুমে সভাপতি এস এম সজীব থাকেন।গত ১৬ নভেম্বর( বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার সময় হলের ২২০ নাম্বার রুমে এ ঘটনা ঘটে। রামদা হাতে চাঁদা দাবির ঘটনায় সেদিন দুজনই ওই রুমে উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর (বুধবার) রাতে সাধারণ সম্পাদক আরিফ ক্যান্টিনের ম্যানেজার জাহিদকে তার সাথে দেখা করতে বলেন এবং পরদিন বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টায় তাকে ২২০ নাম্বার রুমে (সাধারণ সম্পাদক আরিফের রুম) ডাকেন। কিছুক্ষণ পর সভাপতি সজীবও রুমে প্রবেশ করেন। এরপর ক্যান্টিনের বাকির খাতা দেখতে দেখতে ২ লাখ টাকা দাবি করে বসেন তারা । একদিনের মধ্যেএ টাকা পরিশোধের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন এ দুই নেতা। ম্যানেজার জাহিদ থেকে উত্তর না পেয়ে ২১৯ নাম্বার রুম থেকে দেড় হাত লম্বা রামদা নিয়ে ফিরে আসেন সভাপতি সজীব। গলায় ওই অস্ত্র ধরে হত্যার হুমকি দেখিয়ে ২০ নভেম্বরের(সোমবার) মধ্যে চাঁদা পরিশোধের স্বীকারোক্তি মোবাইলে ভিডিও করেন।
এর আগে একই হলের ডাইনিং এ চাঁদাবাজির দায়ে ছাত্রলীগ থেকে ১৬ মাস বহিষ্কার থাকায় প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার করে নেয়া চাঁদার টাকা লস হয়ে যায় তাদের। সে হিসেবে ১৬ মাসের ১ লক্ষ ৬০ হাজারসহ মোট ২ লাখ টাকা তারা ম্যানেজার জাহিদের কাছে পান। এ চাঁদা অনাদায়ে এবং এ ব্যাপারে কেউ জানলে তার বাচ্চাকে স্কুল থেকে গুম করার পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে অভিযোগে। অভিযোগকারী জানান, সভাপতি সজীবের কোন এক নিকটাত্মীয় খুলনার কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক। সে খুনের আসামী হয়েও মাত্র ৬ মাস জেল খেটেছে। তাই এসব বিষয় তার(সজীব) এর জন্য তুচ্ছ বিষয়। ম্যানেজার জাহিদের গলায় অস্ত্র ঠেকানো অবস্থায় এসব কথা বলেন সজীব।
অভিযোগকারী জানান, গতকাল রাতে (২০ নভেম্বর) টাকা আদায়ের উদ্দ্যেশ্যে সভাপতি-সেক্রেটারী দুজনই তাকে কল করেন এবং আজই (মঙ্গলবার) বাড়ি থেকে এসে দেখা করতে চাপাচাপি করেন।
অভিযোগকারী আরও জানান, প্রতিদিনই সকাল-বিকেল ক্যান্টিন থেকে ফাউ খাবার খান নেতা সজীব। কিছুদিন পরপরই তার নানান আত্মীয়-স্বজন এসে ফ্রি খাবার খেয়ে যান। হলে থাকা ডাইনিং এবং চা দোকানেও ১০-১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা নিতেন সজীব ও আরিফ।
সোমবার(২০ নভেম্বর) অভিযোগকারী ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদ চাঁদা দাবির বিষয় এবং তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরারবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে সেক্রেটারি আরিফুর রহমান বলেন, তার সাথে কোন খারাপ আরচণ করা হয়নি। তার উপর আবার চাঁদাবাজি কিংবা অস্ত্র ধরে ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই উঠে না। হলের খাবারের মান খারাপ হচ্ছে এজন্য প্রভোস্ট স্যার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাকে বলার জন্য। তার সাথে আমার রুমের বাইরে ১৬ তারিখ রাতে এ ব্যাপারে মাত্র ২ মিনিট কথা হয়। এর বাইরে কিছু না। গতকাল(সোমবার) রাতে আবার কল দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি কি চিন্তা করলেন খাবারের মানের ব্যাপারে, কোথায় আছেন এ খোঁজ নেয়ার জন্য।"
এ ব্যাপারে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি কোন অভিযোগপত্র পাইনি। তবে ঘটনাটি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের থেকে শুনেছি৷ আমরা একশন নেয়ার চেষ্টা করছি। তার নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় নেবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এমপ্লয়ি না৷ আর এ ব্যাপারে আমি কোন কথা বলতে চাচ্ছি না৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হারুণ-অর-রশিদ বলেন, অভিযোগ পত্র পেয়েছি। প্রভোস্ট বিষয়টি আগে দেখবে। তারপর তিনি ফরওয়ার্ড করে দিলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
উল্লেখ্য, এর আগে ডাইনিংয়ে চাঁদাবাজির বিষয় ব্যাপক আলোচিত হলে গতবছর আগস্টে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শেকৃবি ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় উক্ত দুই নেতাকে৷ অতঃপর এ বছর ৩১ জুলাই তাদের পুনরায় স্ব পদে বহাল করা হয়
এমআই