মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় চারটি সংসদীয় আসনে জাতীয় পাটি, ওয়ার্কার্স পাটি, বিকল্প ধারা ও জাসদ এর মনোনয়ন প্রত্যাশিদের চাপে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ৪৫ প্রার্থী। কাকে কোন আসন দিতে হবে এই নিয়ে এখন চলছে জোর গ্রুপিং ও লবিং। তবে আ’লীগের শরীকরা এবার ছাড় দিতে নারাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কমপক্ষে ২টি এবং সঙ্গী জাতীয় পার্টির সংগঠন রয়েছে এই জেলায়। নির্বাচনে আসন চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের তিনটি দল। আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৪৫জন নেতা কর্মী সাতক্ষীরার চারটি আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন সংগ্রহের শেষ দিনে জেলার চারটি আসনে ফরম নিয়েছেন ৯জন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি একজন, বিকল্প ধারা একজন এবং জাসদের ২জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। সবমিলিয়ে জেলার ৪টি দলের ৫৮জন মনোনয়ন প্রত্যাশী চারটি আসনের মনোনয়ন চান।
এদিকে জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি সাতক্ষীরা-১(তালা-কলারোয়) আসন গত দুই মেয়াদে শরীক দল হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবারো কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়ার্কার্স পাটি আসনটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে, দলের অনেকে মনে করেন শেষ মুহূর্তে মহাজোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির দাবী সাতক্ষীরার কমপক্ষে দু’টি আসন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) ও সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনটি তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাতক্ষীরা-১ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের কমপক্ষে একটি চায় বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিকল্প ধারার কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজাও সাতক্ষীরা-৪ আসনে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা-১ আসন জোট শরীকদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এমন আশঙ্কা থেকে নির্বাচন করবেন এমন একজন আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেন নি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরায় কোন আসনে কে পাচ্ছেন জোট মহাজোটের মনোনয়ন সেদিকে দৃষ্টি আওয়ামী লীগসহ জোট সঙ্গীদের।
আসন ভিত্তিক সাতক্ষীরার চারটি আসনে চারটি দলের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন কমপক্ষে ৫৭জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১৪জন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ স ম আলাউদ্দীন তনয়া লায়লা পারভীন সেঁজুতি, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ সাহিদ উদ্দিন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম লালটু ও জেলা
আওয়ামী লীগ নেতা এড. মোহাম্মদ হোসেন, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, ঢাবির জসিম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির টুটুল, কৃষক লীগ নেতা আফজাল হোসেন।
এই আসনে জাতীয় পাটির মনোনয়ন চান দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত। ওয়ার্কার্স পাটির মনোনয়ন চেয়েছেন বর্তমান এমপি এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাসদ থেকে মনোনয়ন চান জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু।
সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ১১জন। তারা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সহ-সভাপতি বর্তমাস এমপি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, সহ-সভাপতি ড. কাজী এরতাজা হাসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, যুগ্ম-সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দীন, সাংগাঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জিএম ফাত্তাহ, সাংস্কৃকি বিষয়ক সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্না, সদর উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি এসএম শওকত
হোসেন ও সাবেক সচিব শাফী আহম্মেদ।
এই আসনে জাতীয় পাটির মনোনয়ন চান জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, জাতীয় সাংস্কৃতিক পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আফসার আলী, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হবির ছেলে মশিউর রহমান বাবু এবং মাতলুব হোসেন লিয়ন।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৮জন। তারা হলেন, বর্তমান এমপি ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম, নর্দান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহম্মেদ স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা আফসার আলী, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. গোলাম মোস্তফা ও ছাত্রলীগ নেতা খালিদ হাসান নয়ন। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে
মনোনয়ন চেয়েছেন এড. আলিফ হোসেন।
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয় ফরম সংগ্রহ করেছেন ১২জন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম জগলুল হায়দার, সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদ মেহেদী, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা
মাকসুদা খানম মেধা, সাংগাঠনিক সম্পাদক শফিউল আযম লেলিন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতাউর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা বাবলুর রহমান, তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শফিউল্লাহ, আওয়ামী লীগ নেতা এড. মোজাহার হোসেন কান্টু, রনি আহমেদ, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান সুমন ও আনিছুর রহমান আনিছ।
এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চেয়েছেন কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীন ও সাবেক
চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। জাসদের মনোনয়ন চান জাতীয় কৃষক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই- এলাহী। এই আসনে বিকল্প ধারার মনোনয়ন চান সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা।
ফলে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনে শরীকদের চাপে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগের ৪৫ জন প্রার্থী। তবে শেষ মুহুর্তে কে পাবেন দলীয় মনোনয় তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন।
এমআই