সময় জার্নাল প্রতিবেদক:
চলতি বাজেট, বিগত বাজেট ও বাজেট প্রণয়নের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়াদি এবং বাজেট প্রণয়নের এত বড় কর্মযজ্ঞের মধ্যে দেশের সিংহভাগ গরীব মানুষের হিস্যা কতটুকু!-সেটা খুঁজে বের করা। সাড়ে সাত লক্ষাধিক টাকার বিশাল বাজেট প্রণয়নের পরও কেনো দারিদ্র বিমোচন হয় না? তিনি প্রশ্ন করেছেন, কেনো আজও অনেক মানুষ গৃহহীন রয়েছেন! কেনো সৃষ্টির সেরা একজন মানুষকে ডাস্টবিন হতে খাবার খুঁজে খেতে হয়! গৃহহীন মানুষকে কেনো রেলওয়ে স্টেশনে রাত কাটাতে হয় ? এসকল বিষয়ের বিশ্লেষণ নিয়ে প্রকাশিত হলো অর্থনীতিবিদ ও এনবিইআর'র চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিথযশা অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের বই 'গরীব বান্ধব বাজেট' । বাজেট নিয়ে লেখা বইটি বাজেট প্রণয়নকারীদের মনেও চিন্তার রেখাপাত সৃষ্টি করবে।
অধ্যাপক পারভেজ দারিদ্র্যের অর্থনীতি নিয়ে সবসময় সোচ্ছার। একজন সফল শিক্ষক, সুষম সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা, গরীববান্ধব সুষম সমাজ বিনির্মাণে আজীবন কাজ করার প্রত্যয় যার, মৌলিক চিন্তাবিদ, মননশীল লেখক, আজীবন যার অদম্য আগ্রহ গরিবের জীবন ও অর্থনীতি নিয়ে, সবসময় কাজ করছেন অসহায় মানুষের পক্ষে। ।দীর্ঘদিন ধরে সংকটকালে জাতিকে দিশা দিয়ে যাচ্ছেন যিনি। স্পষ্টবাদী হিসেবে পছন্দের ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া অধ্যাপক পারভেজের লেখাও সমাদৃত হয়েছে। দেশের রাজনীতি, দারিদ্র্যের অর্থনীতি ও সাধারন জনগনের পক্ষে তার ক্ষুরধার লেখা ও বলা মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তার লেখায় সমস্যা যেমন আলোচনা করা হয়েছে, তার সাথে ঐসব সমস্যা সমাধানের সুন্দর দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি তার সমাজ ভাবনা নিয়ে লিখেছেন একাধিক বই।
‘গরীব বান্ধব বাজেট' ধারণাটা নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ গরীব। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক পারভেজ “গরীব বান্ধব বাজেট” ধারণার উপর প্রথম স্পটলাইট ফেলেছেন। তিনি এই বইতে বাজেট বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি- নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংকিং খাত, কালো টাকা, অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের পুঁজিসঙ্কট, দুর্নীতি-সুশাসন, দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের চিন্তা-ভাবনা- মন্তব্য ইত্যাদি অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন।
প্রতিবছর যে বিশাল অংকের বাজেট ঘোষণা করা হয় তাতে গরীবের জন্য কতটা বরাদ্দ থাকে এবং তা কতটা গরীবের সাহায্যে লাগে? যারা প্রতিনিয়ত মূল্য সংযোজন করের মাধ্যমে সরকারের অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে চলেছে- তাঁদের জন্য বাজেটে আসলেই কি প্রাপ্তি ঘটে ? এমন যৌক্তিক প্রশ্ন এবং তার উত্তর এতোদিন অবহেলিতই রয়ে গেছে । ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল খরচের বাজেট। এই বাজেটে গরীবের হিস্যা কতটুকু ? অধ্যাপক পারভেজ সেই বিষয়টাই সন্ধান করেছেন বইটিতে । এটাই তাঁর বাজেট চিন্তার মৌলিক দিক ।
বাজেট প্রকাশের পর বাজেট বিরোধীরা বাজেটকে ‘গরীব মারার বাজেট' আখ্যা দিয়ে চুল-চেরা বিশ্লেষণ করেন, যা আমরা প্রতিবছরই দেখে থাকি। কিন্তু অধ্যাপক পারভেজ তার বইয়ে গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন গরীবের বাজেট বলে যে বাজেট উপস্থাপন বা পাশ করা হয়, তাতে গরীবে হিস্যা আসলে খুব কমই থাকে। এই বইয়ে তিনি কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, গরীব মানুষ 'ভ্যাট নামক পরোক্ষ কর' দিলেও বাজেটে তাঁদের জন্য বরাদ্ধ খুবই নগন্য। এই বইতে তিনি দেশের দুর্বল ব্যাংকিং সিস্টেম, দূর্নীতি, কালো টাকা, টাকা পাচার, নারীর ক্ষমতায়ন, বেকারত্ব, নতুন উদ্যোক্তাদের লোন পেতে সমস্যা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, স্বাধীনতা ৫০ বছর পরও কেনো মানুষ গৃহহীন থাকবে? কেনো বেকার থাকবে? কেনো মানুষকে ডাস্টবিন হতে খাবার খুঁজতে দেখা যাবে? কেনো মানুষ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারবে না? তিনি বলতে চেয়েছেন, বর্তমান বাজেট- 'অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ধনিক শ্রেণির বাজেট'। তাই তিনি বইতে উল্লেখ করেছেন বাজেটের দিক পরিবর্তন করে এটাকে 'গরীব বান্ধব' করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশের মানুষের কাছে তিনি পরিচিত জাতীয় অধ্যাপক গরীববান্ধব অর্থনীতিবিদ হিসেবে। ১৯৫৯ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন শিল্পপতি এবং মাতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন পরিচালক ডাক্তার হুসনে আরা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেও অন্নহীন,বস্ত্রহীন,গৃহহীন মানুষদের পাশেই তিনি নিজের ঠিকানা করে নিয়েছেন। স্বাধীনতার আগে শোষণ ছিল এককেন্দ্রিক কিন্তু স্বাধীনতার পর বর্তমানে চতুর্মুখী শোষণে নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র মানুষরা দিশাহারা! এই মহা-ক্রান্তিকালে তাদের পাশে যেন একমাত্র ওয়ান-ম্যান আর্মি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অধ্যাপক পারভেজ। অধ্যাপক পারভেজ সেন্ট প্লাসিডস্ হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএস এ ১৯৮৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গবেষনা করেন। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি দেশ-বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান করেছেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নীতি বিশ্লেষক এবং দেশের একজন নেতৃস্থানীয় গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলাম পারভেজ বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে আন্ডারগ্র্যাড অ্যান্ড পোস্টগ্র্যাড পর্যায়ে ব্যবসায় ও যোগাযোগ শিক্ষা দিয়ে আসছেন।
অধ্যাপক পারভেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির বিজনেস ফ্যাকাল্টির সাবেক ভাইস-ডিন, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আইবিবিটির ভাইস রেক্টর, রুপালী ব্যাংকের পরিচালক, দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বিজনেস স্টাডিজ সেন্টার ফর এআইএম এক্সপ্লোরার এর সম্পাদক, ভারতের মহামায়া কারিগরি ইউনিভার্সিটির ইউপি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডিরেক্টর, সেন্টার ফর গুড গভর্নেন্স, চট্টগ্রাম এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চ (এনবিইআর) এর চেয়ারম্যান।
এমআই