শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনার দিনগুলোয়

কোভিড রণক্ষেত্র থেকে বলছি

বুধবার, মে ২৬, ২০২১
কোভিড রণক্ষেত্র থেকে বলছি

ডাঃ মোহাম্মদ আল-মামুন :

কোভিড হাসপাতালে ঢুকতেই গা শিরশির করে। এখানে যারা আসছে তারা সবাই কোভিড আক্রান্ত বলেই ধরে নিচ্ছি। অন্যথা হবার সম্ভাবনা খুবই কম। রোগী যারা তারা কোভিডই সাথে করে এটেনডেন্ট যারা আসছে তারা ও কোভিড আক্রান্ত হবার কথা যদি না আগেই আক্রান্ত হয়ে সেরে গিয়ে না  থাকেন। লিফটে চড়ার সময় ভাবছিলাম, এর সবকিছুই জীবানুক্রান্ত। সব বাটনসহ। অল্প লোকের মধ্যেই কর্ণারে দাড়িয়ে লিফটে উঠলাম এবং কোন বাটন না চেপেই আইসিইউতে পৌছালাম।

আইসিইউ মানেই বিলিয়ন ট্রিলিয়ন জীবানু।ভারী জীবানুর তকমা এখানে অচল। বিলিয়ন বিলিয়ন জীবানু এখানে ভেসে বেড়ায়। এর ওয়ার্ড জীবানুর কারখানা। সাধারন মাস্কে জীবানু আটকাবে না। এর দেয়াল, দরজা, বাথরুম সবখানেই জীবানুর উপস্থিতির সম্ভাবনা থাকে। যুবক এটেনডেন্ট যারা মা-বাবার সেবা করতে এসেছে তারা মোটামুটি সবাই কোভিড পজিটিভ। তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে তাদের ইমিউনিটি ভালো। ব্যতিক্রমও আছে। কেউ কেউ নিজে আক্রান্ত হয়ে ভর্তিও হচ্ছে। আক্রান্তদের বিরাট অংশই মাস্ক না পড়ার কারনে হচ্ছে।

 আমরা যারা ডিউটি করছি, তারা মোটামুটি সবাই নব্বই পারসেন্ট আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নিয়েই কাজ করছি। ডাক্তারদের যেহেতু ইমিউনিটি কম, তাই ধরেই নিচ্ছি যে আক্রান্ত হলেই পরপারে। অনেকেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন সবার কাছে। এখানকার একদিন ডিউটি মানে অন্য জায়গার একমাস।

যুদ্ধ ক্ষেত্রে দূরে থেকে তবু বুলেট থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু এখানে সব জায়গায় শত্রু। কে যে কখন ঘায়েল করে ফেলবে বলা কঠিন। অদৃশ্য শত্রু খুবই মারাত্মক।

আমার ভয় লাগে না। আমি বিশ্বাস করি, আমাকে দিয়ে যদি দুনিয়ার কোন ভালো কাজ করানোর ইচ্ছা আল্লাহ পোষন করেন তবে আমি বেঁচে থাকবো। আর যদি এরকম ইচ্ছা আল্লাহর না থাকে তবে বেঁচে থাকা সত্যিই বৃথা। মানুষের কাজে না লাগলে এ জীবন আসলেই মূল্যহীন। 

এর মধ্যেই আমাদের সার্ভিস দিতে হবে। মানুষজন আমাদের কথা না মেনে কিংবা চিকিৎসা নিতে গিয়ে যে ভাবেই আক্রান্ত হোক না কেন, রোগী হিসেবে তাদেরকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে হবে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না তারা মূলতঃ অসচেতন। আর এই অসচেতন বিরাট জনগোষ্ঠীই আমাদের সম্পদ। প্রকৃতপক্ষে এরাই আমাদের অস্তিত্ব। তাদেরকে সচেতন করে গড়তে পারিনি এটা আমাদের জাতিগত ব্যর্থতা। এই দায় কোনভাবেই জনগনের উপর দেয়া উচিত নয়। এখানে কে কবে নিজ জাতিগোষ্ঠীর উপর দায়িত্ব পালন করেছে! মজা করে বলতে গেলে বলতে হয়, অনেকের জন্মটাই হয় মাতাপিতার ভুলের দায়ে।  ,সেখানে ভুলের কারনে অসুস্থ হওয়াকে দোষারোপ করা কতটুকু সঙ্গত!

প্রথম দিন রাউন্ডে গিয়েই একজনকে দেখলাম এইচডিইউ-তে বসে আছেন মাস্ক ছাড়া। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, তিনি চা খাচ্ছিলেন। তাই মাস্ক খুলেছেন। অন্য সময় পরে থাকেন। এখানে এসে কারো চা খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে- এটা আগে বুঝিনি ।নরকে বসে চায়ের ইচ্ছে আর কি!

বেশী ইচ্ছে হলে বাইরে গিয়ে খেলেই হয়।

আমার দেশের মানুষ মনে হয় সবই পারে। এইচডিওতে বসে ভাত খাওয়া, চা খাওয়া, বার্গার খাওয়া সবই চলে। ফ্লোরে বিছানাও দেখলাম। কোভিড না এলে বুঝতেই পারতাম না, আমাদের ম্যানারস ডেভেলপমেন্ট কোন পর্যায়ে আছে। যাদের দায়িত্ব বলার তারাও বলছে না। কারণ রোগীর লোকজন ঝগড়া শুরু করে। আমি অবশ্য একটু বেরসিক। সব বিছানা উঠিয়ে দিয়েছি।

 চা খাওয়া ভদ্রলোক রোগী নন, তার মাকে দেখাশোনা করছেন। তার মা কিডনী, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার এর রোগী। সম্প্রতি জ্ঞান হারিয়েছেন। অক্সিজেন ৩০% এ নেমে গিয়েছিলো। কিছুক্ষণ আবার অক্সিজেন ছাড়াই এম্বুলেন্সে চড়েছিলেন ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে। মাকে ডাক দিলে তিনি নড়েচড়ে উঠেন, কিন্তু কিছু বলতে পারেন না। আল্লাহ জানেন, তিনি সেরে উঠবেন কিনা। তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো। অক্সিজেন দেয়া লাগে না এখন আর ।

রোগীর ছেলে ভদ্রলোক দাবী করলেন, গত ছাব্বিশ দিন ধরে আছেন এখানে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। ভাবলাম তাইতো? এরকম ছেলে থাকলে আর কিছু লাগে? নিশ্চয়ই মাস্ক ছাড়া মাস্তি করতেন, আর ঘরে মায়ের জন্য করোনা নিয়ে এসেছেন। তার মা এখন জীবন মরন সন্ধিক্ষণে। একসময় স্বীকারও করলেন যে তাদের ভুলে মা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন সেবা করে প্রায়শ্চিত্ত করছেন।

আপনারা হয়তো এছেলেকে বীর বাহাদুর বলে সংবর্ধনা ও দিবেন। কিন্তু পিছনের ব্যাপারটা চিন্তা করলে অবশ্যই আঁতকে উঠবেন। এরকম কত ভালোবাসার নিবিড় আলিঙ্গন কেড়ে নিয়েছে মা-বাবার প্রাণ!

আমার দেশের সোনার ছেলেরা মায়েদের যৌবন রান্নাঘরে পারের ব্যবস্থা করে,।সকল ঈদ পূজা পার্বনে মাকে রান্নাঘরে ব্যস্ত রাখে। আর বৃদ্ধ বয়সে হয়তো বৃদ্ধাশ্রম। আর এখন বাসায় ভাইরাস এনে পরপারের ব্যবস্থা করে।

দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বজনও ভয়ংকর। কতিপয় আছেন, যারা আসলেই মা-বাবার দেখাশোনা করেন। সেটা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আসলেই কম।

এখানকার একমাত্র ভালো ব্যাপার হলো মায়ের সেবা করার মানসিকতা। এখানে আসা মানেই নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে থাকা। তাঁরা যে একটা সস্তা সার্জিকেল মাস্ক পরে তাতে কোভিড আটকানোর কোন সম্ভাবনাই নেই। পাঁচ টাকার মাস্কে জীবানু আটকায় না, ওটাতে ফিল্টার মেমব্রেন নেই। এইচডিও আইসিওতে ট্রিলিয়ন জীবানু ঘুরে, ভেসে বেড়ায়। এই মাস্ক নিয়ে ওখানে যাওয়া মানেই আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা একশ পারসেন্ট। এই যুবকদের লক্ষণ দেখা দেয় না। কারন এই বয়সের ইমিউনিটি ভালো। অথবা অন্য কোন কারন থাকতে পারে যা জানিনা ।

 খারাপ ব্যাপারগুলো হলো তারা আবার বাইরে গিয়ে মাস্ক বিহীন ঘুরে বেড়ায়, গল্প আড্ডাতে মেতে উঠে। গর্ব করে হয়তো বলেন ও যে " এইচডিওতে সারাদিন থাকি, কি হইছে আমার? নার্স,ডাক্তারগুলো শুধু শুধু দামী দামী পোষাক নষ্ট করে!"আবার এই গল্পের মাধ্যমেই নতুন করে ছড়ায়, জটিল রোগী তৈরী করে।

 অজ্ঞতা মারাত্মকব্যাধি। অজ্ঞতা নিজেই একটা ভাইরাস । শুধু আমাদের মানুষগুলোর অজ্ঞতাই এই কোভিডকে এই দেশে টিকে থাকতে সহায়তা করবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বারোটা বাজাবে। যখন তামাম দুনিয়ার ব্ল্যাকলিস্টে চলে যাবে, তখন প্রশাসন পাগল হবে। সবাইকে মাস্ক পরাতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।

খুব অবাক হবো না যদি অন্যান্য দেশগুলো আমদের সাথে সকল ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় তখন ।
 
আরেক বেডে পেলাম বয়োঃবৃদ্ধ রহমান চাচাকে, চাঁদপুর থেকে এসেছেন  যিনি করোনা বলে কিছু আছে বিশ্বাস করেন না। তার স্যাচুরেশন ৩৫% এ চলে আসে অক্সিজেন না থাকলে। তিনি কখনোই মাস্ক পরেননা। তবে অক্সিজেন নেন। ছেলেমেয়ে নাতিনাতনি সবাই প্রতিষ্ঠিত। ভালো চাকরী করেন তারা। চাচার বিশ্বাস, এখনো অটুট যে মুমিন মুসলমানের করোনা হয় না। তার স্ত্রীর ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম। অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হয়। তিনি ও কোভিডেই ভর্তি। তিনিও একই বিশ্বাস করেন।আল্লাহ্ মনে হয় তাদের বিশ্বাস অটুট রেখেই চলেছেন। দুজনেরই কোভিড নেগেটিভ। যদিও তারা পরীক্ষা করেছেন আক্রান্ত হবার ১৫-২০ দিন পরে। এতো দিন পর সাধারনত পজিটিভ আসে না।

আল্লাহর অশেষ রহমত এখন আর অক্সিজেন লাগে না তাদের।চাচীটির ছুটি হয়ে গেছে, চাচার ও কাল ছুটি হবে। তাকে ব্রেইনের চিকিৎসা দিতে হবে।স্ট্রোক করেছিলেন আগে।
তাদের নাতিনাতনিরা জোর করে এনে ভর্তি করেছিলেন এই ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে।এ যাত্রায় আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন।
    পঞ্চান্ন বছর বয়স্ক এক ভদ্রলোকের সাথে তার পঞ্চাশোর্ধ স্ত্রী এসেছেন সেবা করতে।তিনি নাকের নীচে মাস্ক পরেন।জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কেন এসেছেন আর মাস্ক কেন এভাবে পরেছেন?
আপনি কি পণ করেছেন যে কোভিড পজিটিভ হয়ে ভালোবাসার প্রমাণ দিবেন?
ভদ্রমহিলা বললেন তিনি মাস্ক রাখতে পারেন না।তাছাড়া তার এখন জ্বর ও আছে।কোভিড পরীক্ষা করতে দিলাম।পরদিন পজিটিভ আসলো।তাঁকে ও ভর্তি দিলাম।পাশাপাশি দুজনে ভর্তি। এখন কে কার সেবা করবে আল্লাহই জানে।তাদের দুজনেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন মোটামুটি ভালো।আশা করছি দুজনেই সুস্থ হয়ে যাবেন।
তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তারা কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন।উত্তরটা খুব সোজা। কেউ মাস্ক পরতো না।তবে এখন থেকে মাস্ক পরে থাকবেন জানালেন।তাদেরকে পরামর্শ দিলাম সুস্থ হয়ে গিয়ে আরো দশজন মানুষকে মাস্ক বিষয়ে পরামর্শ দিবেন,তাদেরকে মাস্ক পরাবেন।
 
এবার আরেক মাকে পেলাম- যিনি কোভিড পজিটিভ হয়ে দুদিন আগে ভর্তি হয়েছেন। কোন লক্ষণ নেই। অক্সিজেনও লাগে না। তার সন্তান রিস্ক নিতে চাইলেন না তাই ভর্তি করে দিলেন। তিনি হার্টএটাক নিয়ে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।ওখানে দুইদিন থাকার পরেই কোভিড পজিটিভ হন। হাসপাতা লগুলো কোভিডের আতুরঘর। খুব জরুরী না হলে ওমুখো না হওয়াই ভালো।
     
আরেক বেডে পেলাম একবয়স্ক চাচাকে। যার সেবাদাতার সংখ্যা সবসময়ই চার পাঁচজন। তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমেছিলো ৭০ পারসেন্টে। তৃতীয় দিন রাউন্ডে দেখলাম, তিনি আক্সিজেন ছাড়াই স্যাচুরেশন মেইনটেইন করতে পারছেন।এখনো কোভিড পজিটিভ। তিনি অবশ্য কখনোই জানতে পারেননি যে, তিনি কোভিড পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ যে তিনি এখন ভালো। আরো কয়েকদিন হাসপাতালে রেখে অক্সিজেন লেভেল দেখে ছুটি নেয়ার পরামর্শ দিলাম। অক্সিজেন ভালো দেখে কয়েকজন ছুটি নেয়ার পরে হঠাৎ করে মারা যেতে শুনেছি। এরকম রিস্ক কাউকে না নেয়ার পরামর্শ দেই।

আইসিইউ তে একজনকে পেলাম ৬০-৬৫ বছরের এক মা। ডায়াবেটিস, কিডনী, হাইপ্রেসারে আক্রান্ত সাথে কোভিড পজিটিভ। অক্সিজেন ৭০ এ নেমে আসে প্রায়ই। আমি যখন দেখি তখন ৬৯% স্যাচুরেশন। ৭০ লিটার করে অক্সিজেন চলছিলো। রোগীর লোক বললো, এমন প্রায়ই হয়। আবার ঠিক হয়। আমি নার্স ডেকে রোগীর পজিশন ঠিক করালাম, অক্সিজেন চেক করালাম।রোগীর লোকজন বলেন ভালোই তো আছে এখন ! ১০০ এর মধ্যে ৭০ খারাপ কি!
আমি বললাম ”তাইতো!! এ গ্রেডের মার্ক! আগে বলতাম ফার্স্ট ডিভিশন ”।

সমস্যা হলো আল্লাহর সিস্টেম কঠিন । ৯১% এর নীচে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। খেয়াল রাখুন যেন এর নীচে না নামে।
পনের বছরের ফাতিমা ভর্তি হয়েছে শ্বাসকষ্ট নিয়ে। ৭২% অক্সিজেন স্যাচুরেশন। হাইফ্লো অক্সিজেন পেয়ে এখন ভালো।
 আপাতত এইচডিওতে রাখছি। এরকম বয়সে আক্রান্ত হয়ে স্যাচুরেশন এত কমে না সাধারনত। সে একদিন আগেও সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ ছিলো। ঈদের আগে ঈদের শপিং করেছে সারা শহর ঘুরে ঘুরে। এখন আফসোস করছেন মা-বাবা বোনসহ সবাই। দিল্লী ভেরিয়েন্ট হতে পারে এটি। আল্লাহ সুস্থ করে দিক এই মিষ্টি মেয়েটিকে।

ডাঃ মোহাম্মদ আল-মামুন
কনসালটেন্ট
ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল
মহাখালী,ঢাকা


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল