বুধবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
ইউনুস রিয়াজ, গবি প্রতিনিধিঃ অদম্য ইচ্ছাশক্তি যেমন সফলতার পথ হারিয়ে যেতে দেয় না, তেমনি কঠোর পরিশ্রম মানুষকে পৌঁছে দেয় সফলতার গন্তব্যে। দেশের খ্যাতনামা বিপণন ফার্মাসিস্ট শাহরিয়ার আরিফিন এভাবেই লিখেছেন তাঁর সংগ্রামময় সফলতার গল্প। শীর্ষ প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবির এই নির্বাহী পরিচালক কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন নির্বাহী হয়ে। সেই সাধারণ নির্বাহী থেকে এখন তিনি নির্বাহী পরিচালক।
উৎপাদন নির্বাহী (প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ঔষধ উৎপাদনকারী কারখানার চার দেয়াল তাকে আটকে রাখতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে চাওয়া শাহরিয়ার সবসময়ই চেয়েছিলেন নিজের একটা নিদর্শন তৈরি করতে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ঔষধ উৎপাদনের চাকরি ছেড়ে ঔষধ বিপণন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালসে। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছরের পথচলায় তিনি জেনারেল ম্যানেজার, মার্কেটিং হিসেবে কাজ করেন। এসময় তিনি ইউরোলজি, গাইনোকোলজি, অনকোলজি, নেফ্রোলজি ও ডার্মাটোলজির মত ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। তারই হাত ধরে ইউনিগ্রুপে ইউনিডার্মার সূচনা হয় যেটি এখন দেশর সেরা ডার্মাটোলজি কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও বাংলাদেশে প্রথম আয়রন সুক্রোজ ইনজেকশনের সূচনা তাঁর হাত ধরে। আরিফিনের কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে ডার্মাটোলজিতে। দেশে ত্বকের যত্ন ঔষধের ব্যবহারের(মেডিকেটেড স্কিন কেয়ার) যে রীতি তাঁর হাতেখড়িও হয় শাহরিয়ারের মাধ্যমে। তাঁর নেতৃত্বেই ফ্রেঞ্চ স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড বায়োডার্মা বাংলাদেশে ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। তিনি কাজ করেছেন বায়োডার্মা বাংলাদেশ ও নেপালের কান্ট্রি হেড হিসেবে। ফার্মেসীতে নিজের অর্জিত জ্ঞানের সাথে তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও ভিন্নধর্মী প্রচারণা এদেশে ত্বকের যত্নকারী ঔষধের (মেডিকেটেড কসমেটিকস) বাজারকে করেছে আরও সমৃদ্ধ।
বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশেই ত্বকের যত্নকারী ঔষধের উৎপাদন ও বিপণনের লক্ষ্যে শাহরিয়ার ২০২২ সালে প্রসাধনী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবিতে যোগদান করেন। এখানে দেশীয় ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক মানের ৩টি ব্র্যান্ড- সিওডিল, ক্যাভোটিন ও ডার্মো-ইউ এর উৎপাদন, বিপণন এবং বিদেশী রপ্তানি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। তার যোগদানের মাত্র ১৮ মাসের মধ্যেই দেশীয় ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী তিরিশেরও অধিক ত্বকের যত্নকারী (স্কিন কেয়ার) পণ্যে চালু করেছেন যা এদেশের ফারমাসিউটিক্যালস বিপণনে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
শাহরিয়ার আরিফিন মনে করেন, একজন ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব শুধু ঔষধ প্রস্তুতকরণে সীমাবধ্য না বরং তার কাজের ব্যাপ্তি আরও প্রসারিত। ফার্মাসিস্টদের জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উৎপাদনের সাথে সঠিক বিপণনের মাধ্যমে ভোক্তাদের হাতে নিরাপদ পণ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব। তাই তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে নিরাপদ পণ্য নিশ্চিতে কাজ করে গেছেন নিরলস ভাবে। তিনি তাঁর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের জ্ঞানভাণ্ডার আরও বৈচিত্র্যময় করার উদ্দেশ্যে যোগ দিয়েছেন ১৮টিরও বেশি দেশের বিভিন্ন সম্মেলনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-এশিয়ান অ্যাসথেটিক অ্যান্ড ডার্মাটোলজি কংগ্রেস (ব্যাংকক, থাইল্যান্ড), ২৪তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব ডার্মাটোলজি (মিলান, ইতালি), জার্নিস ডার্মাটোলজিক ডি প্যারিস ২০১৮ (প্যারিস, ফ্রান্স), ১ম NAOS আন্তর্জাতিক পরিবেশক সভা (ডুব্রোভনিক,ক্রোয়েশিয়া) ইত্যাদি। নিজের পেশাদার জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে তিনি 'বিল্ডিং এ মেগা ব্র্যান্ড', 'ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট', 'মার্কেটিং এক্সিলেন্স (বিল্ডিং গ্রেট ব্র্যান্ড)', 'সেলিং স্কিল', 'গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি)'-এর মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। কোয়ালিটি ইন্সটিটিউট অফ আমেরিকা (কিউআইএ), 'ডিপার্টমেন্ট অ্যান্ড পিপল ডেভেলপমেন্ট', 'ফার্মেসি ম্যানেজমেন্ট', 'মার্কেটিং এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স' দ্বারা এদেশের তরুণ ফার্মাসিস্টদের আরও দক্ষ করে তুলতে তিনি গত ১০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন কর্পোরেট ট্রেইনার হিসেবে।
শাহরিয়ার ঔষধ বিপণন জগতে নিজের খ্যাতি বিস্তারের পাশাপাশি একজন ফ্রি-ল্যান্সার ফটোগ্রাফার হিসাবেও স্বীকৃত। তিনি একজন ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন তাঁর আলোকচিত্রে, অংশগ্রহণ করেছেন দেশসেরা বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীতে। তিনি পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট থেকে ফটোগ্রাফিতে বেসিক এবং ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পন্ন করেছেন। শাহরিয়ার আরেফিন খেলাধুলার প্রতিও খুব উৎসাহী এবং চৌকস। তিনি ছিলেন জেলা পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। তিনি নাটোরের জেলা ব্যাডমিন্টন দলের একজন সম্মানিত সদস্য। এছাড়াও তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (GBPSA) এর প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গণ বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (GBPAA) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে তিনি ক্রিকেট দলেরও অধিনায়ক ছিলেন। শিক্ষাজীবনেও শাহরিয়ার ছিলেন দারুণ মেধাবী। তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে পিজিডিএমএম (মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট) ডিগ্রির পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ থেকে এম ফার্ম (ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়া গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি ফার্ম (ফার্মেসি) ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশাদারী মনোভাবের পাশাপাশি তার উষ্ণ ব্যক্তিত্বের কারণে শাহরিয়ার তার সহকর্মীদের কাছে দারুণ প্রশংসিত। শাহরিয়ার আরিফিনের মতে, প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের নিত্য নতুন উদ্ভাবনের মেলবন্ধন এবং তাঁর সঠিক মূল্যায়নই পারে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে তাঁর সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে। তিনি বলেন, নিজের লক্ষ্যে অটুট থেকে পরিশ্রম করে যেতে হবে। কোন কাজকেই ছোট মনে করা যাবে না। সততা, নিষ্ঠা আর নিজের কাজের প্রতি ভালবাসাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। দেশের তরুণ ফার্মাসিস্টদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি যদি সাধারণ একজন নির্বাহী থেকে নির্বাহী পরিচালক হতে পারি তাহলে তোমরা নিজের চেষ্টায় ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারবে।
এমআই