নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সরকার ক্ষমতায় থেকেও যে নির্বাচন সুষ্ঠ হতে পারে সেটি এবার প্রমাণ করতে হবে। সেজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব সবাইকে স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) ম্যাজিস্ট্রেটদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়লের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রের মানেই হচ্ছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হবে। নির্বাচনে যারা সংসদে বসবেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা তারাই সংবিধান গঠন করবেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে যেমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে। নির্বাচনে আরেকটি কারণে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। সেটি হলো- রাজনৈতিক একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। সাধারণত নির্বাচন খুব উৎসবমুখর হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নির্বাচনটা পরিচালনা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে নির্বাচনে মুসলীম লীগের ভরাডুবি হয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। এরপর সব সময়ই নির্বাচন উৎসমুখর হয়েছে।
তিনি বলেন, সে বিষয়টা (উৎসব মুখর হওয়ার) এবার ক্ষুণ্ন হয়েছে। যেহেতু একটা অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন হয়েছিল, সহিংসতাও হয়েছিল। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়েও কিছু বিতর্ক হয়েছে। তবে নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক ছিল। কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। পরবর্তী সময়ে সেটা নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়েছে। যার ফলে আমাদের দেশে প্রচলিত যে নির্বাচনটা নিয়ে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা থাকা দরকার সেটি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
সিইসি বলেন, এবারের নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, একটি সরকার তার দায়িত্বে থেকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। আর নির্বাচন কমিশন বা ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিকে সরকার সাহায্য করতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। আবার সরকারের সহায়তা ছাড়া আমরা নির্বাচন করতে পারি না।
সিইসি আরো বলেন, ১৬ লাখ লোক ভোটের কাজে নিয়োজিত হবে। এতে আট লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আর আট লাখ থাকবেন আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন ইন্টারন্যাশনাল ডাউমেনশন পেয়েছেন। কেননা, আমরা জাতিসংঘের সদস্য। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র নির্বাচনকে নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার এবং আমাদের সঙ্গে তারা বারবার সাক্ষাৎ করছেন। তাদের প্রত্যাশা তারা ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা করেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু করতে হবে। তারা যখন আশা করেন, বুঝতে হবে খুব শক্তভাবেই আশা করেন। তাদের আশা করাটাও অন্যায় নয়। আমরা যেহেতু গ্লোবাল কমিউনিটিতে বসবাস করি এবং গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য।
এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হতে হবে। সেখানে আপনাদের যে দায়িত্ব সেটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝে নেবেন। যে দায়িত্বটা আরোপ করা হবে, সে দায়িত্বটা যদি ভালোভাবে বুঝে নেন, তাহলে দায়িত্ব পালন ও ক্ষমতা প্রয়োগে অনেক বেশি দক্ষ হবেন। নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ভোটের দিন, ভোটের আগে আচরণবিধি প্রতিপালনে কিছু অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা হয়। যেমন সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া, কেন্দ্র দখল হয়ে যাওয়া, এতে ভোটাররা ভোটটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস গড়ে তুলবে হবে, যে নির্বাচনের পরিবেশ আছে, যে আপনারা নির্ভয়ে ভোটাধিকার দিতে পারবেন।
অবাঞ্ছিত লোক যদি ভদ্রলোক হয় তিনি কেন্দ্রে ঢুকলে বাইরে চাউর হয়ে যাবে যে কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। কাজেই কোনো অবাঞ্ছিত লোককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেবেন না।
গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা অবাধে প্রবেশ করতে পারবেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, তারা স্বাধীনভাবে ভেতরে প্রবেশ করে অবাধে বিচরণ ও প্রচার করতে পারবেন। জনগণ যদি গণমাধ্যমে দেখে ভেতরে পরিবেশ সুন্দর, স্বচ্ছ হচ্ছে তাহলে ভোটটা কিন্তু সুন্দরভাবে ওঠে এলো।
এমআই