নিজস্ব প্রতিনিধি:
সারাদেশে একযোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি অলঙ্ঘনীয় সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণকে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচনে সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সিইসি।
এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ঘোষণা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণা শেষে আজ সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায়।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত আওয়ামী লীগ ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হলেও আসনগুলোতে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্রের সংঘাত হচ্ছে বেশি। এরই মধ্যে হতাহত হয়েছে অনেকে।
এবারের নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন ১৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। এছাড়া নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুবরণ করায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে এবার ২৯৯ আসনে হবে নির্বাচন।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা-লীগের ৩০ জন, গণফোরাম নয়জন, গণ-ফ্রন্ট ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের দশজন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৫ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম-লীগ চারজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩ জন, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির ২৬ জন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) চারজন, গণতন্ত্রী পার্টির দশজন।
এবার ২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, এবার ১০ হাজার ৩০০ টি কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এবারের নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।
সময় জার্নাল/এলআর