বুধবার, জানুয়ারী ১০, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবারের নির্বাচন বানচালের জন্য দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র ছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে দেশবাসী আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল এই জনসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, সব বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, ভোট দিয়েছে। এজন্য আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত স্বতস্ফূর্ততা ছিল। ১৩০ বছরের বুড়ি মা ভোট দিতে এসে জানিয়েছে, হাসিনাকে ভোট দিতে এসেছি।
জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর নেই, বাড়ি নেই, তাদের ভবিষ্যৎ নেই, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে। সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্ন, বস্ত্র-বাসস্থান, শিক্ষার কোন কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ভাগ মানুষই দারিদ্র্যের নিচের বাস করত। একবেলার খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে। যার ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, যদিও পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবেন না বলে ইনডেমনিটি জারি করে, তাদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের যে দোসর, আল বদর রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লুটপাত করেছিল, আমাদের দেশে মা-বোনদের পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছিল, সেই সমস্ত যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিচার শুরু জাতির পিতা করেছিলেন, ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতা আসে তারা তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, তাদের ক্ষমতা বসায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে খুনি, আরেক দিকে যুদ্ধাপরাধী তারাই ক্ষমতায়। সেই অবস্থা আমি ফিরে আসি। জনগণে ভোট ও ভাতে নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে ফিরে আসি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে সরকারপ্রধান বলেন, এদেশে মানুষের আর্তসামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গড়ে তুলবেন সে ভাষণ এই জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে বন্দি, সেই মিলওয়ালা জেল, শীতের সময় বরফ, গরমের সময় গরম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কীভাবে রেখেছিল তারা, সঠিকভাবে খাবারও দিত না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোনো পত্রিকা কাগজ কোনো কিছুই ছিল না৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এবং ফাঁসির হুকুম, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে যখন নামেন তিনি ছুটে এসেছিলেন বাংলার জনগণের সামনে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ১০ জানুয়ারি এখানেই (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর চিন্ত, পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ, সেটাই তিনি তুলে ধরেছিলেন।
এমআই