শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন, জোয়ারে এখনো প্লাবিত হচ্ছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা

শনিবার, মে ২৯, ২০২১
বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন, জোয়ারে এখনো প্লাবিত হচ্ছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা

মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটার বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের ছোট ছোট পয়েন্ট গুলো দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হলেও শুক্রবার (২৮মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্যামনগরের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী ও পদ্মপুকুর এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ভাঙ্গন এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি ঢোকা অব্যহত থাকায় ওই সব ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী এবং আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ সহাস্রাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। চারিদিকে কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর লোনা পানির জোয়ার -ভাটার স্রোতধারা বয়ে চলেছে। 

চারদিকে শুধু পানি আর পানি। নেই পর্যাপ্ত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র। দুঃখ, দূর্দশা যন্ত্রণায় কাতর প্লাবিত এলাকার মানুষ। আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে দু’মাস পার না হতেই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খাওয়ার পানির সংকট, রান্না খাওয়া, প্রাকৃতিক কাজ সারাসহ সবকিছুতেই শীমাহীন কষ্ট সহ্য করে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের প্লাবিত মানুষেরা। এসব মানুষ তাদের দুর্বিসহ কষ্ট যন্ত্রণার কথা বলতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছে।

নদী ভাঙ্গনে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। পানির তীব্র স্রোতের কারণে অনেকের বসত ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্লাবিত হয়েছে মসজিদ, মন্দির, স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

২৮ মে শুক্রবার কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন প্রতাপনগর ইউপি’র ৫ নম্বর ওয়ার্ড হালদার বাড়ী জামে মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শফি জানান, ‘আমদের ঘরের মধ্যে কোমর পানি, মসজিদেও কোমর সমান পানি। তাই পানিতে দাড়িয়েই জুম্মার নামাজ আদায় করলাম। আগে তাও জোয়ারে পানি আসলে ভাটায় নেমে যেত, এখন তাও যাচ্ছে না। এখআনে কি করে আমরা বসবাস করবো জানিনা।

আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ২ মাস না যেতেই আমরা অবারও পানিতে ভাসছি। এসময় সকলে মিলে টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৩৩টি প্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছেন। মূল ভাঙ্গন পয়েন্ট গুলো এখনো মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় এসব ইউনিয়ন গুলোতেও নিয়মিত জোয়ার ভাটা চলছে। প্লাবিত এলাকার অনেক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদ-নদীতে জোয়ার অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওায় তার ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া, সুভদ্রাকাটি, রুইয়ারবিল, হরিষখালী, কল্যানপুর, দিঘলারাইট, বন্যতলা ও গোকুলনগর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়।

স্থানীয়দের সাথে নিয়ে দিনরাত কাজ করে কল্যানপুর, দিঘলারাইট, গোকুলনগর, রুইয়ারবিল ও সুভদ্রাকাটি এলাকার বেড়িবাঁধ মেরামত করা সম্ভব হলেও কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী ও বন্যতলা ভাঙ্গন পয়েন্ট এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। 

শুক্রবারের বিকালের জোয়ারে কুড়িকাউনিয়া ও বন্যতালা পয়েন্ট দিয়ে কপোতাক্ষ নদের ও হরিষখালী পয়েন্ট দিয়ে খোলপেটয়া নদীর পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তালিয়ে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি ও ইটের ভাটা। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর। তার ইউনিয়নের ২১ টি গ্রামের মধ্যে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো। মানুষ দূর্বিসহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারি ভাবে দেয়া ৮টন চাউল বিতরণ করা হয়েছে। তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতসহ টেবসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

এবিষয় দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আমল বলেন, তার ইউনিয়নের জেলেখালী, ৩নং গাবুরা ও নেবুবুনিয়া ভাঙ্গন পয়েন্ট এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। পানি ঢোকা অব্যহত থাকায় ১৫ টি গ্রামের অধিকাংশই কম বেশী প্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুক্রবার ৭ টন চাউল ও ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। 
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থিত জনসাধারণের জন্য খাদ্য,
চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আজ শনিবার ইউনিয়নবাসিকে সাথে নিয়ে বাঁধ মেরামতের আরেকদফা চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের বন্যতলা ও ঝাপা এলাকার ভাঙ্গন এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি ঢোকা অব্যহত থাকায় ১৪টি গ্রামের মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো ও স্থানীয় জনসাধারণকে নিয়ে একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি পানিবন্দি অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষা
করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, গত বুধবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ চলছিল। তবে পরবর্তী জোয়ারে কয়েকটি স্থানে আবারো তা ধ্বসে পড়ে। 

বেড়িবাঁধ সংস্কারে ইতিমধ্যে ৬০ হাজার সিনথ্যাটিক ও ১০ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। তার অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংষ্কারে দ্রুত কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বাপ্পি জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ভাঙ্গন পয়েন্ট গুলোর বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। তবে নদ-নদীতে জোয়ার বেশী থাকায় গাবুরা, পদ্মপুকুর ও প্রতাপনগরের বেশ কয়েকটি ভাঙ্গন পয়েন্ট এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এসব ভাঙ্গন মেরামত করতে জরুরী ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমার লোকের উপস্থিতিতে এসব ভাঙ্গন
পয়েন্ট মেরামতের কাজ চলছে।

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল