জেলা প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) আলোচিত এ ঘটনাটি তখন দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত হয়। এমনকি বিদেশের গণমাধ্যমেও ফলাও করে সংবাদ পরিবেশিত হয়।
মঙ্গলবার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এর আগে, গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন বিচারক।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন দিবাগত রাতে উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চরবাগ্গা গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে (৪০) মারধর করে গণধর্ষণ করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ঘটনাটি ঘটায় তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নির্যাতনের শিকার নারী ৪ সন্তানের জননী ছিল। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেন।
রায় ঘোষণার আগের দিন রাতে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এ নিয়ে কথা হয় নির্যাতিত গৃহবধূর স্বামীর সাথে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে কতিপয় ব্যক্তি তাদের বাড়ির সামনে মহড়া দিচ্ছে। বিষয়টি তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। আসামি পক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করে। কোনো সাক্ষীই ভোটকেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেনি।
মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) নামে একজন আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মামলাটির রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় কারাগারে রয়েছে ১৫ জন আসামি। তাদের মধ্যে ৮ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সময় জার্নাল/এলআর