সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, বাকৃবি প্রতিনিধি:
সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছাগলের বাচ্চার সঠিক দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র খামারিদের ছাগল পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রশিক্ষণ কক্ষে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) অর্থায়নে ওই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগ।
জানা যায়,“ ইমপ্যাক্ট অব ক্রিপ ফ্রিডিং উইথ ডিফারেন্ট লেভেলস অব এনার্জি এন্ড প্রোটিন অন প্রোডাকটিভ রিসপন্সেস ইন ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটস" শীর্ষক প্রকল্প শুরু হয় এ বছরের মার্চ মাসে এবং শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। ছাগলের বাচ্চাকে সুষম খাদ্য প্রদান করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এটি মূলত একটি সম্প্রসারণ কাজ। তারই অংশ হিসেবে আজকে ৪০ জন ক্ষুদ্র নারী খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরে এ সকল খামারিদের মাঝে যাদের ছাগলের বাচ্চা রয়েছে তাদের দুধের পাশাপাশি উচ্চ মানের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার প্রদান করা হবে। পাশাপাশি সেই সকল ছাগলের বাচ্চার প্রতি সপ্তাহে ওজন, ব্লাড সংগ্রহ ও পরীক্ষা, পুরুষ ছাগল নির্দিষ্ট সময় পর জবাই করে মাংস ও শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রভাব পর্যেবক্ষণ করা, বাচ্চা কখন হিটে আসলো, কখন বাচ্চা দিবে বিষয়গুলো পর্যেবক্ষণ করা হবে। পরবর্তীতে ছাগলের বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের দ্বার উন্মোচন করা হবে।
বাকৃবির এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহাম্মদ মনিরিজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক মনোরঞ্জন ধর। এছাড়া এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌড় চন্দ্র সাহ, এনিম্যাল সায়েন্স প্রভাষক মো. সৈয়দুজ্জামান আরাফাত, প্রকল্পের রিসার্চ ফেলো পিএইচডি শিক্ষার্থী মাহবুবুল হক এবং মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাহাতুল জান্নাত মৌলিসহ খামারিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রকল্পের সহকারী গবেষক ড. মো. রুহুল আমিন ছাগল পালনের গুরুত্ব, বাচ্চা জন্মের পর তার ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা, খাদ্য ব্যবস্থা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং চিকিৎসাসহ আরো বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রভাষক মো. সৈয়দুজ্জামান আরাফাত, প্রকল্পের রিসার্চ ফেলো পিএইচডি শিক্ষার্থী মাহবুবুল হক এবং মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাহাতুল জান্নাত মৌলিও ছাগলের গুরুত্ব ও বাচ্চার পালন নিয়ে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণ শেষে খামারিদের জন্যে একটি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়।
পিএইচডি শিক্ষার্থী মাহবুবুল হক বলেন, দুইটির বেশি বাচ্চাকালে বা মায়ের দুধের স্বল্পতা থাকলে বাজারের দুধের সাথে সয়াবিনের গুড়া মিশ্রণ করে খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চার বয়স একমাস পার হলে দুধের পাশাপাশি দানাদার ও ঘাসজাতীয় খাবারে অভ্যস্ততা শুরু করতে হবে। এতে বাচ্চা পুষ্টিহীনতায় ভুগবে না এবং দৈনিক বৃদ্ধিও ঠিক থাকবে।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা জানি আমারে দেশে ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুহার বেশি। সেটা কমিয়ে বাচ্চার সঠিক পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে মায়ের দুধের পাশাপাশি উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ দানাদার খাবার সরবরাহ করবো। পরবর্তীতে বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি পরীক্ষার পাশাপাশি জিনগত পরীক্ষাও করবো। যে জীন এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী সেটা নিয়ে পরবর্তীতে আরো কাজ করা হবে।
ময়মনসিংহ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক মনোরঞ্জন ধর বলেন, বর্তমানে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনার কারণে খামারিদের ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। তবে মৃত্যুহার সম্পূর্ণ কমানো সম্ভব হয়নি। একসাথে ৪/৫ টাও বাচ্চা দেয় ছাগল। কিন্তু তারা সবাই সমানভাবে খাবার পায় না। এজন্যে পুষ্টির অভাবের সাথে সাথে তাদের বৃদ্ধিও সঠিকভাবে হয় না। পুষ্টির অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চা মারা যায়। তাই যদি বাচ্চা জন্মের পর থেকেই সব বাচ্চাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি দানাদার খাবার দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টির পাশাপাশি দৈনিক বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে। এতে অল্প সময়ে খামারিরা বেশি লাভ করতে পারবে।
এমআই