সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নেকাব খুলতে না চাওয়ায় এক শিক্ষার্থীর বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) না নেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এবার মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘নিকাব না খোলায় ভাইভা থেকে বের করে দিয়ে পর্দার মতো বিষয়কে অবজ্ঞা করার মাধ্যমে আমাদের বোনকে হেনস্তা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের উপর আঘাত হেনেছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের সংবিধান এবং স্বাধীন মানবাধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে লজ্জিত করেছে জাতির সামনে। আমরা শিক্ষাগুরুদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই কোন অধিকারে তাকে ভাইবায় বসতে দেওয়া হয় নি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অতি দ্রুত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিলো ইসলামী শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়নি। এখানে ঠিকই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আছে কিন্তু ইসলামের শিক্ষা নেই, ইসলামী অনুষদ আছে, কিন্তু ইসলাম নেই, ইসলামের কোনো কার্যকলাপ নেই।’
এছাড়াও বক্তব্যে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যেন কোন ক্ষতির এবং হেনস্তার সম্মুখীন না হয় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা৷ পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য এ ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্মার্ট ডিভাইস এবং নারী শিক্ষিকার দ্বারা শিক্ষার্থীদের পরিচয় সনাক্তের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
এদিকে মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট চার দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিকাব না খোলায় বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। যেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ, ধর্ম পালনে বাধা প্রদান ও সম্পূর্ন সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। প্রত্যেক ধর্ম ও আমাদের সংবিধান নারীকে পোশাকের স্বাধীনতা প্রদান করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হলো ব্যক্তিগত অধিকার, ধর্ম পালনের অধিকার, আত্মরক্ষা ও শরীরের ব্যক্তিগত শুদ্ধতার অধিকার। কিন্তু যখন একজন নারী তার ইচ্ছেমতো বোরখা, নিকাব ও হিজাব পরায় তার নিজ বিভাগের শিক্ষকগণ তার পোশাকের স্বাধীনতায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হয় তখন এর মাধ্যমে সর্বত্র উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয়।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে আমাদের চারপাশে এমন কি কোনো প্রযুক্তি বা কিছুই নেই যার দ্বারা কারও ধর্মীয় ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা ক্ষুন্ন না করে একজন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা যায়? নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের এমন নগ্ন হস্তক্ষেপের জন্য আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুবই মর্মাহত এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত তাদের দাবিগুলো হলো- ১. ন্যাক্কারজনক ও হীন এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২. ক্যাম্পাসের সর্বত্র শালীন, রুচিসম্মত পোশাক পরিধানের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৩. প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্ব স্ব ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ৪. পরবর্তীকে যেন কেউ কারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মতো দুঃসাহস না করে তা নিশ্চিত করা।
স্মারকলিপি গ্রহণকালে উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের যেকোনো জায়গায় ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। আর শিক্ষককে হতে হবে বাবার মতো। তার আচরণ, স্নেহ, ভাষা সবকিছু বাবার মতো হবে। কিন্তু আমাদের এখানে কিছু ব্যাত্যয় ঘটেছে, আমাদের আচরণ বাবার মতো হচ্ছে না। আমরা আজকে উপাচার্যের সাথে বিষয়টা নিয়ে বসবো।’
উল্লেখ্য, এর আগে গতকালও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলো ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সময় জার্নাল/এলআর