বুধবার, জানুয়ারী ২৪, ২০২৪
মো: ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি :
জামালপুরে চলমান শেখ হাসিনা নকশিপল্লী প্রকল্পের জন্য তিন ফসলি কৃষি আবাদি ভূমি অধিগ্রহণ না করে কৃষকদের বাঁচানোর আকুল আবেদন জানিয়েছে ভূমির মালিকরা। কৃষকদের জীবন ও জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই কৃষিজমি রক্ষায় তারা মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা নকশিপল্লী প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরেরও দাবি জানান।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে পৌরসভার চরচন্দ্রায় আবাদি ভূমিতে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান কৃষকরা।
প্রায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কৃষক আয়েজ উদ্দিন, জিয়াউল হক, বারেক মন্ডল, মোশাররফ হোসেন, আলমগীর হোসেন, ফারুক হোসেন, ইলাত আলীসহ কৃষিজমির মালিকরা।
বক্তারা বলেন, সরকারি আদেশে জামালপুর জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার অন্তর্গত জামালপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রা ও চরচন্দ্রা মৌজা এবং মেলান্দহ উপজেলার চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নের চরবানিপাকুরিয়া ও চরপলিশা মৌজায় কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করে "শেখ হাসিনা নকশীপল্লী, জামালপুর (১ম পর্যায়)" নামে একটি বৃহৎ প্রকল্প স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।
এই প্রকল্পের জন্য দুটি উপজেলার ওই চারটি মৌজায় ৩'শ একর ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বিগত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে দুই দফা নোটিশ পাঠানো হয় জমির মালিক কৃষকদের কাছে। এই প্রকল্পটি সম্পর্কে জানাজানি হওয়ার পর থেকেই কৃষি আবাদের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার গভীর শঙ্কায় স্থানীয় হাজার হাজার কৃষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আমরা কৃষকরা সবাই এই জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য জামালপুরের জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে অনুরোধ করার পরও প্রশাসন থেকে দুই দফা ভূমি অধিগ্রহণের নোটিশ পাওয়ার পর জমির মালিক কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তারা তিনফসলি আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপনের শঙ্কায় রয়েছেন।
বক্তারা আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি আবাদি তিনফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কলকারখানা স্থাপন না করার জন্য আপনার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও একটি মহল জামালপুর সদর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলার ওই চারটি মৌজার কৃষকদের কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে সেখানেই 'শেখ হাসিনা নকশিপল্লী নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কৃষি জমিগুলো কখনোই অনাবাদি পড়ে থাকে না। ঝিনাই নদীর পশ্চিমপাড়ে উর্বর চরাঞ্চলের এসব জমিতে আমন ধান, বোরো ধান, পাট, মরিচ, সরিষা, কপি, গোল আলু, মিষ্টি আলু, টমেটা, মুলা, গাঁজর, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল ও সবজি আবাদ হয়। এসব ফসল ও সবজি আবাদ করে নিজেদের খাদ্যচাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে কৃষকরা অর্থউপার্জনের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করে আসছেন বংশ পরম্পরায়। এই তিনফসলি জমিগুলো হলো কৃষকের প্রাণ। চারটি মৌজার আওতায় বিস্তীর্ণ এই আবাদি জমিতে ফসল ফলানোর জন্য কৃষকদের ২৮৫টি অগভীর নলকূপ থেকে পানিসেচ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, "শেখ হাসিনা নকশীপল্লী, জামালপুর" নামের প্রকল্পটি আমাদের তিনফসলি কৃষিআবাদি জমিতে করা হলে দুই উপজেলার হাজার হাজার কৃষক তাদের কৃষি আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। এতে করে প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোসহ সবদিক থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। অধিগ্রহণের আওতায় আনার জন্য নোটিশকৃত ওই ৩'শ একর জমি তিনফসলি কৃষি আবাদি জমি কিনা, আপনার মাধ্যমে তা তদন্ত করিয়ে প্রকল্পটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও আমরা মনে করি। তাই হাজার হাজার কৃষকদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাদের জীবনজীবিকার তাগিদে আমাদের তিনফসলি কৃষি জমিগুলো অধিগ্রহণ না করার জন্য আপনার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি। একই সাথে এই প্রকল্পটি অন্য কোনো স্থানে করার জন্য আপনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।'
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন কৃষকরা। এর অনুলিপি ভূমিমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রণালয়ের সচিব, জামালপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য, সদর উপজেলা ও মেলান্দহ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
এমআই