মো. ফরিদুল ইসলাম, সিকৃবি প্রতিনিধি:
নতুন প্রজন্মের গ্রাম বাংলার পিঠা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ও শীতের আমেজকে রাঙিয়ে তুলতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো "ঝরা পাতার উৎসব" শীর্ষক পিঠা উৎসবের। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত সংগঠনগুলোর আয়োজনে এই পিঠা উৎসবকে ঘিরে মেতে উঠেছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখী চত্বরে এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন সিকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভুঁঞা। উদ্বোধন শেষে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন উপাচার্য।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা বলেন, "আগে গ্রামগঞ্জে প্রায় পিঠার আসর বসতো, শীতকালে এমন কোন পরিবার নেই যেখানে পিঠার আয়োজন করা হতোনা । কিন্তু শহরমুখী এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। আমরা এখন পিঠা না বানিয়ে রাস্তায় দোকানে কিনে খাওয়ার চেষ্টা করি। আগে পিঠা বানানো কঠিন কাজ হলেও অনেকেই অনেক ধরনের পিঠা বানাতো কিন্তু বর্তমানে সবকিছু সহজলভ্য হওয়ার সত্বেও মানুষ পিঠা বানায় না। আমরা এই ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে ভুলেছি।"
উপাচার্য আরো বলেন, "আজকের এই উৎসবের ফলে নতুনরা বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলি সম্পর্কে পরিচিতি হওয়ার সুযোগ পাবে। এটা শুধু উৎসব না বরং বিভিন্ন ঐতিহ্যের এক মিলন মেলা। আমরা চেষ্টা করব এরকম অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলোকে টিকিয়ে রাখার।"
ঝরা পাতার উৎসব শীর্ষক এই পিঠা উৎসবে এবার দশটি স্টলে পসরা বসে ঐতিহ্যবাহী ও বাহারী সব পিঠার। এর মধ্যে ঝাল পিঠা, চিতই পিঠা, নকশি পিঠা, ডিমের পুডিং,পাটি সাপটা পিঠা, জয় বাংলা পিঠা উল্লেখযোগ্য। উৎসবকে ঘিরে বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে নানা আয়োজন।
আয়োজক কমিটির এক সদস্য বলেন, "শীতকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকলেও আমাদের ক্যাম্পাসে পিঠা উৎসবের মতো একটি অনুষ্ঠানের অভাব আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকদিন ধরেই বোধ করে আসছে। তাই শিক্ষার্থীদের এমন আক্ষেপের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত সংগঠনসমূহের উদ্যোগ ও প্রশাসনের সহায়তায় আমরা এইবছর "ঝরা পাতার উৎসব" শীর্ষক এই শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা যতটা আমেজ আশা করেছিলাম তার থেকেও অনেক বেশি সারা পেয়েছি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বাহিরাগত দর্শনার্থীদের থেকে। আশা করি সামনের বছরগুলোতেও আমরা এমন অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সার্বিকভাবে সহায়তা করবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, "এইরকম পিঠা উৎসবের ফলে শিক্ষার্থীসহ যারা আসছেন, সবারই বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার সাথে পরিচিত হওয়ার এটি একটা সুবর্ণ সুযোগ। আমি প্রতিটা স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছি , শিক্ষার্থীরা খুব যত্নসহকারে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু পিঠা বানিয়েছে । আমি আশা করছি এরকম উৎসবমুখর পরিবেশ ও সাড়া পেলে প্রতিবছরই এর ধারা অব্যাহত থাকবে।"
এদিকে পিঠার পাশাপাশি উৎসবে আগত অতিথিদের আনন্দ দিতে সংগীত পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ ও অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পিঠা উৎসব দেখতে ও খেতে ক্যাম্পাসে ভিড় জমে পিঠা প্রেমীদের।
উৎসবে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, "এইরকম পিঠা উৎসব কাছ থেকে প্রথম দেখলাম । এখানে অনেক রকমের পিঠার সমাহার ছিল যা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। এরকম পিঠার উৎসব হলে আমরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে জানতে পারব।"
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কোভিড পূর্ববর্তী বছরগুলোতে সিকৃবিতে অনুষদ ভিত্তিক পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও কোভিড পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় বন্ধ ছিল এই আয়োজন। এর মাধ্যমে প্রায় চার বছর পর সিকৃবিতে আয়োজিত হলো পিঠা উৎসবের।
এমআই