মামুন সোহাগ : এক শুক্রবারের সকাল। হঠাৎ পেটেব্যাথা। কাঁতরাতে কাঁতরাতে সকালে পেরিয়ে দুপুর। ব্যাথা কমে গায়ে জ্বর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। জ্বর কমেনা ; কাপুনি দিয়ে বাড়ে। ধাপে ধাপে ১০৩, ১০৪ ডিগ্রী। জ্বরের সাথে অস্থিরতা। মুখে কিছুই ঢোকেনা। কোনোরকমে একটু মুখে নিই। তখনই বাধে বিপত্তি! পেট চুষে হড়হড় করে বমি। এই বুঝি গেলাম অবস্থা। পরদিন বিকাল বাদে জ্বর ছাড়লেও দূর্বলতা আর পেটেব্যাথা তীব্রভাবে শুরু হয়। তখনও ভাবি আমি করোনার সাথে যুদ্ধ করছি।
দু'দিন বাদে নমুনা নিয়ে গেলো। ২৩ ঘন্টা পর মেইলে জানান ছিলো, আমি সত্যিই করোনায় আক্রান্ত। তখন পুরো দেশ টালমাটাল। হু হু করে চারপাশে মানুষ মরছে। হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। আমি নিজে ভেবেই নিছি এই বুঝি শেষ হলাম। সময় ফুরিয়ে আসছে। কাধ ভেঙে আকাশ পড়ছে।
রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া মাত্রই আলাদা হয়ে যাই। আলাদা রুম, ওয়াশরুমে জীবন বেঁধে ফেললাম। চললো ৭/১০ দিনের মতো। এ কি জীবন। মুখে কিছু নিতে পারিনা। নিলেই বমি। পেটেব্যাথা চলছেই। হতাশায় আরেক অসুস্থতা। মুঠোফোন আর ভার্চুয়াল জগতে হাজার মানুষ। অথচ কেউ নেই। করোনা আক্রান্ত হয়ে যতটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মানুষ তার থেকে বেশি ক্লান্তি আসে একাকিত্বে। সবার সাথে হাতে হাত থাবড়ে আড্ডা না দিতে পারার শূণ্যতায়।
ঘুণাক্ষরেও তখন ভাবিনি আমিও একদিন প্রাণভরে হাসবো। সবার সাথে বাঁচতে পারবো। এই অনুভূতিটুকু শুধু সেই'ই বুঝবে যে এ যুদ্ধে লড়েছে, যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। সেসসয় একটা বেলার কথা খুব মনে পড়ে, খুব খেতে ইচ্ছে করছে। কিচ্ছু খেতে পারিনা স্যালাইনের পানি ছাড়া। খেলেই বমি ব্যাথা। খুব খেতে ইচ্ছে করছে তখন। ক্ষুধার জ্বালা ৪০ হাজার পাওয়ার ওষুধে মিটেছে। জীবন এমনও হয়… আহ!!
ভ্যাকসিনের যুগে করোনালাপ বড্ড নিষ্প্রাণ। তবুও যুদ্ধজয়ের গল্পটা বারবার কড়া নাড়ে। কত মানুষ সন্তানহারা হয়েছে, কেউ ভাই হারা হয়েছে, কেউবা পরিবারের একমাত্র অভিভাবক, প্রিয়জন হারিয়ে আজও ভাবে 'ভ্যাকসিন কেনো তখন এলোনা'। নিরবে বিলাপ করে। এতোসবের পরও ত বেঁচে আছি। অনিশ্চয়তার আর যন্ত্রনার হাজাট্টা মুহুর্ত পার করে এখনো প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে পারি।
এতেই 'আলহামদুলিল্লাহ'।
পৃথিবীর আবার একদিন শান্ত হবে।
সবাই প্রাণখুলে হাসবে। প্র ত্যা শা য়…
সময় জারনাল/এমআই