মাহমুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়াকে স্বপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অর্থ কমিটির (এফসি) সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এমন একটি সুপারিশ সভার কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো আবু তাহের।
অভিযুক্তের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনের আলোকে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত অর্থ কমিটির এক সভায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তের আলোকে ১ম থেকে ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত ১৫০০ টাকা করে দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি (কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া) ৫ম গ্রেডকেও ১০০০ টাকা দেয়ার বিষয়টি যুক্ত করেন কার্যবিবরণীতে। এবং ডিসেম্বর থেকে এই ভাতা তিনি দিয়ে আসছিলেন। এই ব্যাপারে তাকে দুই দুইবার মানা করা হলেও তিনি মানেননি। ফলে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপাচার্য স্যারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া তার কাজকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নিতেন না।। এছাড়া তিনি যে পদে বহাল আছে সে পদের জন্য প্রযোজ্য যোগ্যতা তার নেই। প্রতিবার অর্থ কমিটির মিটিংয়ে তার কাজ করে দেয়ার জন্য তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে তিনি আনতেন। এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও কোন কথা কানে তুলেননি। মানতেন না কোন নিয়মশৃঙ্খলা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে। যদি পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা আসলেই টেলিফোন বিলের এক হাজার টাকা প্রাপ্য থাকেন সেটা পাবেন। কিন্তু বর্তমান সরকারি নির্দেশনায় যেটা আছে সেটা শুধু চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত। এখন সরকার নির্দেশনা না আসলে কিভাবে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা টাকা পায়!
তিনি আরো বলেন, কামাল সাহেব বিষয়টি মৌখিক বলেছিলেন যে ইউজিসির পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা মোবাইল ভাতা পায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম গ্রেড কেন পাবে না! আমি বলেছিলাম ঠিক আছে আমি চিঠি দিব তারপর যা সিদ্ধান্ত আসে দেখা যাবে। কিন্তু চিঠির কোন উত্তর পাওয়ার আগেই তিনি কোন নির্দেশনা না মেনেই এই ভাতা দিতে থাকেন। আমার কাছে শেষ তিন মাসের হিসাব এসেছে। তদন্তের মাধ্যমে আরো বেরিয়ে আসবে।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকির ছায়াদুল্লাহ খানকে আহ্বায়ক করে ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে আছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ মকসেদুর রহমান।
তদন্ত কার্যক্রমের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকির সায়েদুল্লাহ খান জানান, আমরা চিঠি পেয়েছি। দুই একদিনের মধ্যে কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করবো। আপনারা দ্রুতই ফলাফল পাবেন।
অভিযুক্ত কামাল ভূঁইয়ার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া অর্থ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/এমআই