নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত নারী সাংবাদিক ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’র লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ায় ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না বলে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নামে ওই নারী সাংবাদিক।
ওই নারী সাংবাদিকের লাশ এখনও হস্তান্তর না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়ুয়া। তিনি বলেন, “অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’র ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার ওই লোক ছাড়াও আরও একজন অভিশ্রুতি শাস্ত্রীকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করেছেন।”
ওই নারী সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও চাকরিক্ষেত্রে নিজের নাম ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে শনিবার বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে— ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে অভিশ্রুতির নাম ‘বৃষ্টি খাতুন’ নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং তার মরদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিশ্রুতির মৃত্যুর খবরে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ছুটে আসেন এক ব্যক্তি। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে আসা সাবরুল আলম সবুজ নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে অভিশ্রুতির বাবা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, অভিশ্রুতির আসল নাম বৃষ্টি খাতুন।
তবে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নামের ক্ষেত্রে কোনোটিতে বৃষ্টি খাতুন আবার কোনোটিতে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামটা দেওয়া আছে। এসব নথিতে বাবার নামের জায়গায় সাবরুল আলম সবুজ এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম লেখা থাকলেও চাকরির জন্মবৃত্তান্তে মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী লেখা।
ওই নারী সাংবাদিককে ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নামে চিনতেন তার সহকর্মীরা। ফেইসবুকেও তার ওই নাম পাওয়া যায়। মন্দিরে গিয়ে নিয়মিত পূজা-অর্চনাও করতেন তিনি।
২০ বছর বয়সী ওই তরুণীর জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইডেন কলেজে প্রবেশপত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নামের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন গরমিল রয়েছে। লাশ গ্রহণ করতে এসে সাবরুল আলম বলেন, অভিশ্রুতি আমার মেয়ে। ওর জন্ম ২৫ ডিসেম্বর মনে হয়। আমার মেয়ে। ওর ডাক নাম বৃষ্টি খাতুন। গ্রামে নাম বৃষ্টি, স্কুলে নাম বৃষ্টি, কুষ্টিয়া গভর্নমেন্ট মহিলা কলেজে যখন পড়েছে, তখনও বৃষ্টি, ঢাকাতে যখন ভর্তি হয়েছে ইডেন কলেজে, ঢাবি সাত কলেজের অধীনে, তখনও বৃষ্টি, দর্শনে পড়াশোনা করে রোল নম্বর ২৭৬, তখনও বৃষ্টি।
অভিশ্রুতি বা বৃষ্টির জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইডেন কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে বাবা-মায়ের নামে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, স্থায়ী ঠিকানা সব জায়গায় একই।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ইস্যু করা জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বৃষ্টি খাতুন হিসাবেই রয়েছে। সেখানে পিতার নাম সবুজ শেখ এবং মাতার নাম বিউটি বেগম। কলেজের প্রবেশপত্রেও তার একই রকম তথ্য আছে।
সাবরুল আলম সবুজ যে এনআইডি কার্ড দেখিয়েছিলেন, তাতে বৃষ্টি খাতুন নাম দেখে প্রতারক ভেবে পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধন সনদে আছে নাম অভিশ্রুতি লেখা হলেও বাবার নাম লেখা হয়েছে মো. সাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম।
অন্যদিকে, চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নিজের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী লিখেছেন তিনি। তবে বাবার নাম লেখা হয়েছে সাবুরুল আলম এবং মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী।
জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং জন্মবৃত্তান্তে জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর রয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৮।
অভিশ্রুতির ধর্ম পরিচয় নিয়ে আলোচনা চলছিল ফেইসবুকেও। নিজেকে অভিশ্রুতির ‘কাছের বন্ধু’ পরিচয় দেওয়া মাহফুজুর রহমান নামের একজন এক পোস্টে লিখেছেন, ধর্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সমাধানে প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে তার কাছে। কিন্তু পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় শনিবারও মেয়ের লাশ বুঝে পাননি সাবরুল আলম সবুজ।
এমআই