ইবি প্রতিনিধি
মেগাপ্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবন নির্মাণে এখন পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কাটা পড়েছে ১ হাজার ২১৬টি গাছ। সর্বশেষ এবার দুই যুগ পুরনো তিনটি গাছ কেটে মঞ্চ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সেটাও দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝখানে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুই ভবনের মাঝখানে মঞ্চ হলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের মাঝে তৈরি করা হচ্ছে বৈশাখী মঞ্চ। মঞ্চ তৈরি করতে রোববার (৩ মার্চ) দুই ভবনের মাঝখানের রাস্তার পাশের তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। এদিকে পাশেই খালি জায়গার থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে মঞ্চ নির্মাণের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সোমবার এর প্রতিবাদে দিনব্যাপী মঞ্চ তৈরির জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ, গ্রীনভয়েস ও ‘ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’। এছাড়া অভয়ারণ্যের উদ্যোগে দুটি খুঁটি গেড়ে তাতে কালো কাপড় টাঙানো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা গাছ কাটা নিয়ে তাদের মন্তব্য লিখে ও ব্যঙ্গ চিত্র একে সাঁটিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি জানিয়ে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছে সংগঠনগুলো।
আন্দোকারীরা বলেন, ‘উন্নয়নের নামে হুটহাট গাছ কাটা কিভাবে উন্নয়ন বয়ে আনে তা বোধগম্য নয়। বর্তমানে একটি মঞ্চ আছে তাও কাজে আসেনা। আরো মঞ্চ করতে চাইলে একাডেমিক ভবন থেকে দূরে ফাকা জায়গায় করা যেতো। এখানে কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার সাথে দায়িত্ব অবহেলার পরিচয় পাওয়া যায়।
এর আগে সকালে কাটা গাছগুলোর ছোট টুকরো করে ভ্যানে বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। এসময় শিক্ষার্থীরা এসে তাদের কাজ বন্ধ করে দেন। এবং প্রশাসন তিনটি গাছের বিনিময়ে ৩০০ গাছ রোপন না করা পর্যন্ত কাটা গাছগুলো নিতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে গাছ কাটার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শাখা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়।
দুইযুগ আগে নিজস্ব অর্থায়নে কর্তন করা গাছগুলোসহ প্রায় ১১০০টি গাছ রোপন করেছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২৪ বছর আগে নিজস্ব অর্থায়নে গাছগুলো রোপন করেছিলাম। বিষয়টা বিব্রতকর। শুনে আমার খুব কষ্ট লেগেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী শরিফ উদ্দীন বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু সকালে শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ চলবে কিনা প্রশাসন না জানানো পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলেই গাছ কাটা হয়েছে। কাজের প্রয়োজনে গাছ কাটাই লাগে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে সারি সারি গাছ লাগানো হবে।
আরইউ