জোবায়ের আহমদ, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) এর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি পূরাতন মেডিকেল সেন্টার ভবন বর্তমান আনসার ক্যাম্পের পূর্ব পাশে অবস্থিত। শহীদ মিনারটি আমাদের সকলকে বায়ান্নের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে স্মরন করিয়ে দেয়।
কিভাবে কখন তৈরী হলো এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার! সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার শুরুতে। টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একাডেমিক কার্যক্রম চালু হয় ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবরে।
২০০২ সালের ২১ নভেম্বর অধ্যাপক ড. ইউসুফ শরীফ আহমেদ খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এ দুইটি বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেন। তখনও মাভাবিপ্রবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান হয়নি। ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং অনুষদের সর্বমোট ৭৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৫ জন শিক্ষক নিয়ে একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। আট মাস পরে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স নামক দুটি নতুন বিভাগ খোলা হয় লাইফ সায়েন্স অনুষদের অধীনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করে ডেইলি বাংলাদেশ এর মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি শুভ দে। আইসিটি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী শহীদুল হাসান সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি স্যার প্রয়াত প্রফেসর ড. ইউসুফ শরীফ আহমেদ খান যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অবকাঠামোসহ ছাত্রছাত্রীও ছিল না। তাই প্রথম বছর ২০০৩ সালে তৎকালীন ভিসি কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে টাংগাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান। প্রটোকল অনুযায়ী ভিসি স্যার সম্মানিত এবং সিনিয়র হলেও লোকাল এডমিনিস্ট্রেশন ডিসি সাহেবকেই প্রাধান্য দেন এবং অনেকটা উপেক্ষিত হন আমাদের ভিসি। তাই ২০০৪ সালে একুশে ফেব্রুয়ারী পালনের মিটিং এ বিষয়টা উত্থাপিত হলে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী হলেও শহীদ মিনার বানিয়ে একুশে পালনের পক্ষে জোর দাবী করেন। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্জিনিয়ার সারোয়ার ইসলামকে ভিসি মহোদয় একটা অস্থায়ী নক্সা বানিয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে বলেন, সে মোতাবেক ৩-৪ দিন আগে একটা নক্সা দেখান। সামান্য পরিবর্তন করে প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেয়া হয় শহীদ মিনার নির্মানের। জায়গা নির্ধারন করা হয় দিঘীর উত্তর পারে তৎকালীন লাইব্রেরীর পাশে। শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ভিসি মহোদয় ১৮ ফেব্রুয়ারী কিন্তু পারিবারিক বিশেষ অসুবিধার কারনে তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারলেন না। তার অনুমতি নিয়ে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব সৈয়দ ইরফানুল বারী সাহেব, শিক্ষকদের মধ্যে মতিউর রহমান (সিএসই) ও সরদার জব্বার ( সিপিএস) কে নিয়ে প্রথম ফাউন্ডেশন স্টোন স্থাপন করা হয়। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে গেল মাভাবিপ্রবি এর শহীদ মিনার। তবে পুরো কাজ শেষ হলো ২০শে ফেব্রুয়ারী। তখনও শহীদ বেদীর কনক্রিট শক্ত হয়নি ইন্জিনিয়ার সাহেবের তত্ত্বাবধানে পুরো বেদী কালো কাপড় বিছিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ২০শে ফেব্রুয়ারী ভিসি স্যার এলেন ক্যাম্পাসে রাতে ১২:০১ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে একুশের অনুষ্ঠান সূচনা করেছিলেন।
ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, এতিমখানা সহ সকল প্রতিষ্ঠানকে একসাথে করে রাত বারোটা এক মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। পুরো আনুষ্ঠানটা ছিল সুন্দর ও সুশৃঙ্খল। সাত জন শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়র প্রথম ব্যাচের ( সিএসই ও আইসিটি বিভাগের) ৮০ জন ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভাইস চ্যান্সেলরের দক্ষ নেতৃত্বের কারনে পুরো একুশের অনুষ্ঠানটি সার্বজনীন হয়েছিল।
সময় জার্নাল/এলআর