বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

মেলান্দহে ইজিপিপি প্রকল্পে অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব!

শনিবার, মার্চ ২৩, ২০২৪
মেলান্দহে ইজিপিপি প্রকল্পে অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব!

মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি : 

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের ১ম পর্যায়ের কাজ শ্রমিক ছাড়াই কাগজ কলমে হাজিরা দেখিয়ে শেষ হয়েছে । এ প্রকল্প তালিকায় ভুয়া শ্রমিকদের নাম নিবন্ধন করায় প্রতিটি প্রকল্পের কাজে কাগজে কলমে কর্মসূচির শ্রমিক থাকলেও সিংহভাগ শ্রমিক মাঠে নেই ।

শ্রমিকদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমুদয় টাকা লুটপাটের জন্য শ্রমিকের বদলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ট্রাক্টরে আবার কোথাও ভেকু মেশিনে দায়সারাভাবে মাটি কেটে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও ইউনিয়নের কোথাও প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া কয়েকটি প্রকল্প বার বার তালিকাভুক্ত করা হলেও সে প্রকল্পের রাস্তাগুলোও ঠিকমত মেরামত হয়নি। এসব প্রকল্প কাজে নয়, কাগজের মাধ্যমে নয়-ছয় করে প্রকল্পের অর্থ সংশ্লিষ্টরা হরিলুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দুঃস্থ পরিবারগুলোর দারিদ্র নিরসন ও দুর্যোগে ঝুঁকিহ্রাসে সক্ষমতা বৃদ্ধিই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য থাকলেও প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে এই কর্মসূচির লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে। সুষ্ঠু,স্বচ্ছ ও সময়োচিত বাস্তবায়ন না হওয়ায় যেমন সুফল পাচ্ছেন না অতিদরিদ্র শ্রমিকরা, ঠিক তেমনি সরকারের ইজিপিপি কর্মসূচির আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে সঠিক তদারকিও করছে না। 

প্রকল্প এলাকায় নামে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করালেও কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে শতভাগ হাজিরা। এভাবে নিয়মানুযায়ী কাজ না হলেও প্রকল্পের বিল পাশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের যোগসাজশেই দূর্নীতির এমন মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে প্রকল্পে  শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও মাটি কাটা হয়েছে মাহিন্দ্র দিয়ে। যা প্রকল্পের সভাপতিদের মুখ থেকেই শোনা যায়। প্রকল্পের অর্থ শ্রমিকের মোবাইল নাম্বারে পৌছানোর কথা থাকলেও একাউন্টের সিম ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের নিকট। অকপটে স্বীকার করেন প্রকল্পের সভাপতি গন। শ্রমিকের তালিকায় দেখা যায় একই সিরিয়ালের সিম নাম্বার। কোন কোন প্রকল্পের সভাপতি বলতেই পারেনা তিনি প্রকল্পের সভাপতি।কিছু ইউনিয়নে দেখা যায় একই প্রকল্প গত অর্থবছরেও ছিলো।

মেলান্দহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির ( ১ম পযার্য়ের) ২৬৯ টি প্রকল্পে 

৪০ দিনের এই কর্মসূচিতে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে ২ হাজার ৮৮৪ জন অতিদরিদ্র নারী-পুরুষ শ্রমিকের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। 

প্রকল্পগুলোর তালিকা মোতাবেক ৭নং প্রকল্পে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ী মিঞাবাড়ী কবরস্থান পরিচ্ছকরণ, ১০নং প্রকল্প নাংলার ভলগা বাজার পরিচ্ছন্নকরণ ও

৪১নং প্রকল্প চরবানীপাকুরিয়ার চরবানীপাকুরিয়া ইউনিয়নের ভাবকি বড় বাড়ীর সামনে থেকে আলাল মেম্বারের বাড়ী হয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরেও ছিলো যা ২০২৪-২৪ অর্থবছরেও বরাদ্দ দেওয়া হলেও মেরামত লক্ষ্য করা যায়নি।  

এছাড়া সরেজমিনে নয়ানগর ইউনিয়নের প্রকল্প নং-২৬ মেঘারবাড়ি ফুলমিয়ার বাড়ি গেন্দার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে ৩৩জন শ্রমিকের মজুরী রয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা । 

প্রকল্প নং-৪১ চরবানীপাকুরিয়া ইউনিয়নের ভাবকি বড় বাড়ীর সামনে থেকে আলাল মেম্বারের বাড়ী হয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজে ৬০জন শ্রমিকের মজুরী রয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রকল্প নং-৪২ চরপলিশা মধ্যপাড়া সোনার বাড়ী হতে মান্নার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে ৬১ জন শ্রমিকের নামে বরাদ্ধ রয়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

প্রকল্প নং-৭ কুলিয়া ইউনিয়নের ঢালিরভিটা রেললাইন হইতে রমারপাড়া মোস্তাফার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজে ২৫ জন শ্রমিকের মজুরী রয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার টাকা।

প্রকল্প নং-১২ তারা কান্দি কুদ্দুস দেওয়ানের বাড়ির মোড় হইতে পীরগাছা আবুল হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজে ৩০ জন শ্রমিকের নামে বরাদ্ধ রয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

প্রকল্প নং-৬৬ শ্যামপুর ইউনিয়নের প্রতাপঝগড়ী ইদগাহ মাঠে মাটি ভরাট ও ইদগাহ মাঠ ব্রীজ থেকে হবিজল ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজে ৩০ জন শ্রমিকের নামে বরাদ্ধ রয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। 

প্রকল্প গুলির এলাকাবাসীর অভিযোগ, গায়েবি নাম উল্লেখ করে তৈরি করা হচ্ছে এসব প্রকল্প। আর এসব প্রকল্পের কাগজপত্রে শ্রমিকদের নাম তালিকাসহ অন্যন্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ থাকলেও সরেজমিনে তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ও অসাধ্য বটে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরাও জানে না তারা এ প্রকল্পের কাগজপত্রে শ্রমিক। কারণ শ্রমিকের বদলে এসব প্রকল্পে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা  ট্রলি গাড়ি ও ভেকু মেশিন দিয়ে প্রকল্পের দায়সারাভাবে নামমাত্র মাটি কাটে। তারা কোন শ্রমিককে কাজ করতে দেখেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় একই চিত্র উপজেলার সিংহভাগ প্রকল্পের। 

অপরদিকে, প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও ইউনিয়নের কোথাও প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা যায়নি। ভূয়া  নামের তালিকা তৈরি করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করতেই সাইনবোর্ড সরবরাহ করা হয়নি বলে অভিযোগ জনসাধারণের। অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের নামে সরকারের ইজিপিপি প্রকল্পের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই।

এ বিষয়ে চরবানীপাকুরিয়া ইউনিয়নের ৭নং প্রকল্প ভাবকি বড় বাড়ীর সামনে থেকে আলাল মেম্বারের বাড়ী হয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের সভাপতি ইউপি সদস্য আলালের কাছে একই রাস্তার কাজ দু-বার করেও রাস্তায় কেনো কোনো মাটি কাটা হয়নি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন, সভাপতি আমি হলেও সব নিয়ন্ত্রণ করে চেয়ারম্যান। প্রটোকল অনুযায়ী সভাপতি থাকতে হয় এজন্য দিছে সভাপতি।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ ভুট্টোর কাছে জানতে চাইলে তিনি শালিশিতে আছেন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।

এদিকে ১১ নং শ্যামপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও ৬৯নং প্রকল্পের সভাপতি শাহাজাহানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি যে প্রকল্পের সভাপতি সেটা জানেন না। চেয়ারম্যান তার থেকে আগেই সই নিয়ে রেখে প্রকল্পের সভাপতি  করেছেন। চেয়ারম্যান নিজেই প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সায়েদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এসব কাজ মেম্বারদের দেখভালের দায়িত্ব বলে এড়িয়ে যান তিনি। আবারো জানতে চাইলে মুঠোফোনে একাধিকবার চেস্টা করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। 

কুলিয়া ইউনিয়নের এক প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য (মহিলা) কামরুন্নাহার বলেন, যেই মাটি কেটেছি দেখে আপনারা অজ্ঞান হবেন।কত সাংবাদিকের নিকট সাক্ষাৎকার দিলাম।কাজ দেখে তারা প্রশংসা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার বক্তব্যের সাথে বাস্তবের কোন মিল পাওয়া যায়নি।

মেলান্দহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক বলেন, তার সকল প্রকল্প দেখা হয়নি। অফিসের অনেকেই প্রকল্প দেখেছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য ছুটিতে ছিলেন। ছুটি শেষে এখন দায়িত্ব নিয়েছেন।একই প্রকল্প পরপর দুই অর্থবছরে থাকার বিষয়ে জানান বন্যা কবলিত এলাকায় একই প্রকল্প টানা দুই বছর থাকতে পারে। কোথাও কোন ধরনের অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা হক বলেন,‘ইজিপিপি কি আমি নতুন এসেছি এটা নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না, নতুন এসেছি কয়েকদিন মাত্র হয়েছে। আমি কাজগুলো দেখতেছি কোথায় কি কাজ হচ্ছে, তারপর আমি বলতে পারবো। বিভিন্ন সাইট থেকে দেখতেছি কোথাও সমস্যা পেলে ব্যবস্থা নিব। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল