নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
আট ভাই-বোন, তার মাঝে পাঁচ জনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দু'জন মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত। এক দশক আগে পিতাকেও হারিয়েছে। সত্তর ঊর্ধ বৃদ্ধা মা'ও মানসিক ভারসাম্যহীন। বর্তমানে পরিবারে নেই কোনো কর্মক্ষম ব্যক্তি।প্রতিবন্ধী ভাতার দুটি কার্ড ছাড়া সরকারি কোনো সহায়তাই তাঁদের ভাগ্যে জোটেনি আজও। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই। পরিত্যক্ত ফুফুদের বাড়িতে কোনোভাবে বসবাস করছে পরিবারটি।
এমন পরিবারের চিত্র দেখা গেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে।
এমন অসহায় পরিবারের পাশে দাড়িয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের "NSTU Society For Disabilities" সংগঠনটি। প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামনে আসে সহায়সম্বলহীন এই পরিবারের। যা নোবিপ্রবির "NSTU Society For Disabilities" নজরে আসে। পরে তাদের পেইজ থেকে লাইভে সহযোগিতার বার্তা পৌঁছে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। গত বুধবার ২৭ মার্চ পরিবারটির হাতে তাদের সাহায্য পৌঁছে দেয় সংগঠনের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,খাদিজা আক্তারের চার বোন, চার ভাই। কেউই জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী নন। পাঁচ-ছয় বছর বয়সের পর মণি সাদা হয়ে চোখে ছানি পড়ে। আর্থিক দৈন্যের কারণে বাবা গোলাম মোস্তফা তাঁদের কারও ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। ২০১৪ সালে তিনি মারা যান। বাবার শোকে মা আনোয়ারা বেগম স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরিবারে আরও অন্ধকার নেমে আসে।
২০২২ সালে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান খাদিজার বড় ভাই জসিম উদ্দিন (৪০)। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বড় বোন রৌশন আক্তার মারা যান ৮ মার্চ। অর্থের অভাবে তাঁদের কারও যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর পর তাঁদের কাফনের কাপড়ও কিনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের দানের টাকায়।
"NSTU Society For Disabilities" আহ্বায়ক বলেন, "দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তিন ভাই-বোনের নেই থাকার বসতবাড়ি, ঠিকমতো জুটে না খাবারও" এই শিরোনামে গত ২৩ মার্চ প্রথম আলোর একটি সংবাদ আমাদের নজরে আসে। সংবাদটি আমাদেরকে খুবই ব্যথিত করে। আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, এই পরিবারটি যেন পবিত্র ঈদের আনন্দ সঠিক ও সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমাদের ইচ্ছে, পরিবারটির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার। এবং তাদের উপযোগী একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।"
NSTU Society For Disabilities এর সদস্য সচিব ইয়াসিন হোসেন বলেন, "আমরা এত স্বল্প সময়ে এত সাড়া পাবো তা ভাবিনি। এই কাজটি করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীতে আজও মানবতা বিরাজমান রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই পরিবারটির পাশে দাড়ায়। এই পরিবারটিকে সমাজের মুলধারায় নিয়ে আসতে ভুমিকা পালন করবেন। আমরা বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের যে উদ্দেশ্য আমরা সে উদ্দেশ্য সফলভাবে সার্থকতায় রুপান্তরিত করতে পারব।"
আরইউ