মিজানুর রহমান সিনহা
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এই ভূমিতে যখন থেকে ইসলামের বিজয় হয়, তখন থেকেই পদচারণা শুরু হয় পীর, ফকির আর আওলিয়াগনের আগমন। ধর্ম তখন মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে বিরাট বড় ভূমিকা পালন করে। এই ধারা অব্যাহত থাকে বিশ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত। এরপর থেকেই কিছু অসৎ ধর্মকে ব্যবহার করে শুরু রাজনীতি বা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে। এমন অনেক বিখ্যাত নেতা আছেন, যারা নিজেরা শরাবের ভেতর ডুবে থাকতেন, অথচ নিজেকে ধর্মের রক্ষা কর্তা হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপন করতেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যার মধ্যে অন্যতম। এরপর ১৯৭১ সালের দিকে তাকানো যাক, ধর্মীয় বৈধতা দানের কথা বলে কত মা বোনকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে, যার এখনো পুরোপুরি খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুরুষের রক্তে যে হলি উৎসব করেছিল তার কথা আর না-ই বা বললাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন শাসক নিজেদের আখের গোছাতে এবং সমস্ত অপকর্ম থেকে দায় মুক্তি পেতে এই পবিত্র পথকে ব্যবহার করেছে, এবং যার ব্যাবহার অদ্যাবদি লক্ষণীয়।
এরপর আশা যাক বর্তমান শতকে, আগের শতকে ধর্মের সীমিত ব্যবহার হলেও এখন তা মহামারি আকার ধারণ করছে। মানুষ একচ্যুয়াল জগতের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতেই বেশি থাকতে পছন্দ করে। আর রাজনীতি, সংস্কৃতি, ও ধর্মের চর্চা সেখানেই চলে।
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের চেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষটির প্রতিই বেশি সমাদর। কাছে মানুষ পাশে থেকেও যোজন যোজন দূরে। তাছাড়া এই ভার্চুয়াল জগত বাস্তবতাকে আড়ালে রেখে মানুষকে গড়ে তুলছে একেকটা নরপিশাচে। হাতের নাগালেই সমস্ত ধ্বংসলীলা ঘুরপাক খায়, যেখানে নিজেকে রক্ষা করা সহজ কথা নয়। যার বদলৌতে একজনের সাথে অসংখ্য জনের প্রেমের নামে দেহ ভোগ, বিবাহিত জীবনের শৃঙ্খল ভেঙে পরকীয়ায় আসক্তি। এমনকি বাবা তার ঔরসজাত সন্তানের সাথে নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত, এবং তা দুজনের সম্মতিতেই। এছাড়াও আপন মেয়ে বাবাকে নিজের স্বামীর মত করেই দেখে, এবং মায়ের ওপর চালায় বর্বরতা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পুত্র সন্তান, যে ধর্মের কথা বলে অপকর্মের বৈধতা দিতে ব্যাস্ত। এক হতভাগা মা অকপটে জনপ্রিয় একটি টিভি অনুষ্ঠানে তার অসহায়ত্ব তুলে ধরে এর থেকে প্রতিকার পথ জানতে চান।
এর সাথে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, লোকটা সমাজে ধার্মিক ও ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত।
প্রেমকে আমরা পবিত্র হিসেবে জানি, যেটি মূলত কপোত-কপোতীর জন্য বৈধ সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ হয়েই করতে হবে। ভালোবাসার নামে এক সাথে থেকে আকাশ বাতাস সাক্ষী রেখে দেহভোগের পর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার নাম প্রেম নয়। আজকাল অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা। প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে প্রেমিক দ্বারা বা প্রেমিকা দ্বারা প্রতারিত হয়ে অনশন কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। পরকীয়ার বলি হচ্ছে সন্তান, তাও নেজের মায়ের হাতে। এসব দেখে দেখে এখন নিজেকে ও উত্তরসূরীদের নিয়ে ভয় হয়। কোন দুনিয়ায় আসলাম, যেখানে গুনাহের মোহে মানুষ অন্ধ হয়ে সুখের একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে বাংলায় ছিলো উত্তম বান্দাদের পদচারণায় মুখরিত, আজ সেখানে গড়ে উঠেছে পাপের শহর। যেখান থেকে পালাবার কোন পথ আর খোলা নেই।
ফিরে আসুক মানুষের মনুষ্যত্ববোধ,
হোক সমাজের সকল অপকর্ম রোধ।
লেখক ও কবি: মিজানুর রহমান সিনহা
সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আরইউ