মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
মঘাদিয়া ইউনিয়নের শেখেরতালুক এলাকার হাসিনা বেগম। স্বামীহারা বিধবা হাসিনা বেগমের সংসারে ২ মেয়ে ১ ছেলে। টানাপোড়েনের সংসারে নুন আনতে পান্তা পূরায়। কথা বলার এক ফাঁকে জানালেন কোরবানির ঈদে এলাকার মানুষে দেয়া গরুর মাংস ছাড়া তার কিনে খাওয়ার সাধ্য নেই। এমনকি পবিত্র রমজান মাসেও খেতে পারেননি এক টুকরো গরুর মাংস। তিনি আজ গরুর মাংস পেয়ে অনেক খুশি। বললেন সন্তানদের নিয়ে পেটভরে দুয়েক বেলা ভাত খেতে পারবেন তিনি।
অন্যদিকে সাহেরখালী থেকে আসা কোরবান আলি জানান, বাজারে গিয়ে আমাদের গরুর মাংস কেনার সাহস হয়নি কখনও। তিনি বলেন, রিক্সা চালিয়ে যা আয় করি ওই টাকায় কোন রকম দিন পার করি। ২ ছেলে ২ মেয়ের পড়ালেখার খরচ ও সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে পড়ি। এছাড়া বর্তমান উর্ধ্বমূখী দ্রব্যমুল্যের কারনে যা আয় করি সব টাকায় খরচ হয়ে যায়। আজকে হিতকরী’র দেয়া গরুর মাংস ঘরে নিয়ে গেলে বউ-বাচ্চার মুখে হাসি দেখতে পারবো।
শুধু বিধবা হাসিনা আক্তার কিংবা রিক্সা চালক কোরবান আলি নয় এমন শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটালো মিরসরাই উপজেলার অন্যতম সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিতকরী। রোববার (৭ এপ্রিল) উপজেলার শতবর্ষী আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল থেকে সংগঠনটির সদস্যরা শতাধিক পরিবারে হাতে তুলে দেন গরুর মাংস।
হিতকরী’র সভাপতি জহির উদ্দিন রনি জানান, হিতকরী সব সময় ব্যতিক্রমী কাজের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এই কাজটিও আমাদের জন্য ব্যতিক্রম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিতকরী’র একজন সদস্যের সহযোগিতায় হাসি ফুঁটলো শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের মুখে। তিনি চেয়েছেন আমাদের মাধ্যমে সঠিক বন্টন হোক। আমরা সেটা চেষ্টা করেছি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার খোঁজ নিয়ে। আসলে কি তারা মাংস পাওয়া যোগ্য দাবিদার কিনা তাদের যাচাই বাছাই করে হাতে তুলে দিয়েছি। তিনি জানান, সংগঠনটির অতীত অভিজ্ঞতা ও নীতি অনুযায়ী এমন সব পরিবারের মাঝে এবারও মাংস পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যারা সাইনবোর্ডধারী গরিব নয়, অভাবে আছেন কিন্তু সামাজিক অবস্থান বা আত্মসম্মানের ভয়ে চাইতে পারেন না এমন সব পরিবারের মাঝে মাংস বিতরণে অগ্রাধিকার দিয়েছি। যা আগামীতেও চলমান থাকবে। এছাড়া শেষ ১০ রমজান থেকে আমরা ঈদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছি যা এখনও চলমান।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হিতকরী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ‘হিতকরী পাঠগৃহ’, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে ইফতার, আগুনে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা, জেলেপাড়ায় বিচার থেকে বঞ্চিত মানুষকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া, মানসিক রোগীদের সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচার, বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠমুখি করতে পুরস্কার প্রদান, ফ্রি কোচিং, কুইজ আয়োজন গেল করোনা মৌসুমে কর্মহীন মানুষদের ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, রমজানে সামাজের অসচ্ছল পরিবারের ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে সংগঠনটি। শিক্ষার্থীদের এ সংগঠন বর্তমানে দেশ-বিদেশে প্রায় ৩শ সদস্য নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে সবাজ বিনির্মাণে কাজ করছে।
এমআই