সাইফুল ইসলাম রুদ্র, নরসিংদী প্রতিনিধি:
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নরসিংদীর ৬ উপজেলার মধ্যে ৩ উপজেলায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন এমপি ও মন্ত্রীর আত্মীয়রা।
এরমধ্যে পলাশ উপজেলায় রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ডা. আনোয়ারল আশরাফ খান দিলিপের স্ত্রীর বড় ভাই ঘোড়াশাল পৌরসভার সাকে মেয়র শরীফুল হক, শিবপুর উপজেলায় রয়েছেন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌসী ইসলাম ও মনোহরদী উপজেলায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছোট ভাই নজরল মজিদ মাহমুদ স্বপন।
এবার উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক নৌকা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামীলীগ। এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করতে মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের নির্দেশনাও দিয়েছে দলটি। নির্দেশনা অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও ঘোড়াশাল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরীফুল হক প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য পলাশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এলক্ষ্যে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে পোস্টারিংসহ স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। শরীফুল হকের ছোট বোন আফরোজা দিলিপের স্বামী ডা. আনোয়ারল আশরাফ খান দিলীপ নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের ৩ বারের সংসদ সদস্য। আফরোজা দিলিপ নিজেও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি।
এছাড়া সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারল আশরাফ খান দিলীপ এর ছোট ভাই সাবেক সাংসদ কামরল আশরাফ খান পোটন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে রয়েছেন। ভাগিনা আল মুজাহিদ হোসেন তুষার ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র। চরসিন্দুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন রতন সম্পর্কে এমপির বেয়াই এবং ডাংগা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাবের উল হাই ফুফাতো ভাই।
এমপির বোন ডোরা খান পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আসীন, ভাই লিটন খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, এমপির আরেক বোন পৌর মেয়র তুষারের মা নিগার সুলতানা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, গজারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন এমপির স্ত্রীর ফুফাত ভাই, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তানজিরল হক রনি এমপির শ্যালক, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন এমপির শ্যালক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী না দিলেও পলাশের এমপি বর্ধিত সভা করে তার স্ত্রীর ভাইকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এমপির পরিবারটির মতের বাইরে মতপোষণ করলে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোসহ শরীফুল হকের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান নেতাকর্মীরা। এতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করছেন এমপি ও তার ভাগিনা মেয়র তুষার।
শিবপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী, শিবপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌসী ইসলাম সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তিনি মাঠে প্রচার প্রচারনাও করছেন। এছাড়া এমপির ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সামসুল ইসলাম মোল্লাও উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তার ভাবী এমপির স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেয়ায় তিনি মাঠে নিরব হয়ে যান।
একইভাবে মনোহরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছোট ভাই নজরল মজিদ মাহমুদ স্বপন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১ ভোট পেলেও তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ৮ মে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে বেলাব উপজেলা ও মনোহরদী, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে রায়পুরা ও শিবপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সময় জার্নাল/এলআর